For faster navigation, this Iframe is preloading the Wikiwand page for মুহম্মদ শহীদুল্লাহ.

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
জন্ম
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

(১৮৮৫-০৭-১০)১০ জুলাই ১৮৮৫
মৃত্যু১৩ জুলাই ১৯৬৯(1969-07-13) (বয়স ৮৪)
শিক্ষাপিএইচডি
মাতৃশিক্ষায়তনসর্বন বিশ্ববিদ্যালয়
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাঅধ্যাপনা
পরিচিতির কারণবহুভাষাবিদ, ভাষাবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ
আত্মীয়মুর্তজা বশীর (পুত্র)
পুরস্কারস্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮০), একুশে পদক (২০০২), ডিলিট

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (১০ জুলাই ১৮৮৫ - ১৩ জুলাই ১৯৬৯) ভারতীয় উপমহাদেশের একজন বাঙালি বহুভাষাবিদ ও দার্শনিক ছিলেন। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অবিভক্ত চব্বিশ পরগনা জেলার পেয়ারা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

শিক্ষাজীবন

[সম্পাদনা]

১৯০৪ সালে হাওড়া জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং ১৯০৬ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এফ.এ (বর্তমান এইচএসসি’র সমমান) পাশ করেন। ১৯১০ সালে সিটি কলেজ, কলকাতা থেকে সংস্কৃতে সম্মান-সহ বি.এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্বে এম.এ (১৯১২) ডিগ্রি অর্জন। এ ছাড়াও, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্যারিসের সর্বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট উপাধি (১৯২৮) লাভ করেন। পড়াশোনা শেষ করার পূর্বেই কিছুকাল তিনি ১৯১০ সালে যশোর জেলা স্কুলে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।

আধ্যাত্মিক শিক্ষা

[সম্পাদনা]

ফুরফুরা শরীফের বিখ্যাত আধ্যাত্মিক শিক্ষক মোহাম্মদ আবু বকর সিদ্দিকির নিকট আধ্যাত্মিক শিক্ষা এবং খেলাফত লাভ করেন।[][]

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]
যুবক শহীদুল্লাহ

এন্ট্রান্স পাশের সময় থেকেই মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বিভিন্ন ভাষার প্রতি অতি উৎসাহী ও আগ্রহী হয়ে উঠেন এবং একাধিক ভাষা শিক্ষা শুরু করেন।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ যশোর জেলা স্কুলের শিক্ষক (১৯০৮-০৯) হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন; তারপর সীতাকুণ্ড হাইস্কুলে কিছুদিন প্রধান শিক্ষকের (১৯১৪-১৯১৫) দায়িত্ব পালন করার পর তিনি ১৯১৫ থেকে ১৯১৯ সাল পর্যন্ত চব্বিশ পরগণার বসিরহাটে আইন ব্যবসা করেন। ১৯১০ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে বেদ পঠনের অনুমতি দেননি পণ্ডিত সত্যব্রত সামশ্রমী। স্যার আশুতোষের চেষ্টায় ও কলিকাতা উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি বেদপাঠের সুযোগ পান কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে।[][]। ১৯১৯ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেনের সহকর্মী হিসেবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক হিসেবে কাজ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতবাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। পাশাপাশি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২২ থেকে ১৯২৪ সালে পর্যন্ত আইন বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। ফ্রান্সের সর্বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৮ সালে পি.এইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও রিডার হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখান থেকে ১৯৪৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। অবসরের পর তিনি বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন।[] ১৯৫৩ - ১৯৫৫ সালে তিনি পুনরায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ফরাসি ভাষার খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসাবে কাজ করেন। ১৯৫৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও পালি বিভাগে যোগদান করে ১৯৫৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ প্রায় ২৪টি ভাষা আয়ত্ত করেছিলেন।[] এর মধ্যে ১৮টি ভাষার ওপর তার উল্লেখযোগ্য পাণ্ডিত্য ছিল।[] উল্লেখযোগ্য ভাষাসমূহ হলো- বাংলা, উর্দু, ফারসি, আরবি, ইংরেজি, অসমীয়া, ওড়িয়া, মৈথিলী, হিন্দি, পাঞ্জাবি, গুজরাতি, মারাঠি, কাশ্মীরি, নেপালি, সিংহলি, তিব্বতি, সিন্ধি, সংস্কৃত, পালি ইত্যাদি।

উর্দু ভাষার অভিধান প্রকল্পেও তিনি সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। পরে পূর্ব পাকিস্তানি ভাষার আদর্শ অভিধান প্রকল্পের সম্পাদক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৬১ - ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির ইসলামি বিশ্বকোষ প্রকল্পের অস্থায়ী সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক গঠিত বাংলা একাডেমির পঞ্জিকার তারিখ বিন্যাস কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। তার নেতৃত্বে বাংলা পঞ্জিকা একটি আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ পায়।

সাহিত্য

[সম্পাদনা]

শহীদুল্লাহ সবসময়ই সাহিত্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এম.এ পাশ করার পরই তিনি বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির সম্পাদক হন। ১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের সভাপতি ছিলেন। তিনি উর্দু অভিধান প্রকল্পেরও সম্পাদক ছিলেন। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ অনেক বই লিখেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো -

  • ভাষা ও সাহিত্য
  • বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত
  • দীওয়ানে হাফিজ
  • রুবাইয়াত-ই-ওমর খৈয়াম
  • নবী করিম মুহাম্মাদ
  • ইসলাম প্রসঙ্গ
  • বিদ্যাপতি শতক
  • বাংলা সাহিত্যের কথা (২ খণ্ড)
  • বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
  • ব্যাকরণ পরিচয়
  • বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান
  • মহররম শরীফ
  • টেইল ফ্রম দি কুরআন
  • Buddhist Mystic Songs (১৯৬০)
  • Hundred Sayings of the Holy Prophet

ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা

[সম্পাদনা]

বহু ভাষাবিদ, পণ্ডিত ও প্রাচ্যে অন্যতম সেরা ভাষাবিজ্ঞানী হিসেবে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন একজন খাঁটি বাঙালি ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান। জাতিসত্তা সম্পর্কে মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র স্মরণীয় উক্তি ছিল

আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশি সত্য আমরা বাঙ্গালী।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই দেশের রাষ্ট্রভাষা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হলে বাংলা-কে রাষ্ট্র ভাষা করার পক্ষে যে ক-জন ব্যক্তি জোরালো বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। তার এই ভূমিকার ফলে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পথ অনেকখানিই প্রশস্ত হয়।

আরবি হরফে বাংলার ব্যাপারে বিরোধিতা

[সম্পাদনা]

১৯৪৭ দেশভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ফজলুর রহমান আরবি হরফে বাংলা প্রবর্তনের প্রচারণা চালাতে থাকেন। ১৯৪৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর করাচিতে অনুষ্ঠিত নিখিল পাকিস্তান শিক্ষক সম্মেলনে ফজলুর রহমান ভাষার ইসলামিকরণের স্বার্থে বাংলাকে আরবি লিপিতে লেখার প্রস্তাব করেছিলেন, এবং এর প্রতিক্রিয়ায় মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ জটিলতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করে এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন, এবং বাংলাকে অপরিবর্তিত অবস্থায় পূর্ব বাংলা রাষ্ট্রভাষা তথা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন।[]

আরবিকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব

[সম্পাদনা]

মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বিশ্বাস করতেন যে, বাঙালিরা ইংরেজি শেখার সাথে সাথে উর্দু শিখতে পারে, তিনি এও বিশ্বাস করতেন যে: "যেদিন আরবি পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে, সেদিন পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি ন্যায়সঙ্গত হবে।"[] তাই ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে ১৯৪৯ সাল থেকে তিনি এ লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তান আরবি ভাষা সংঘের সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন, পাকিস্তান গণ পরিষদে পেশ করার জন্য একটি খসড়া স্মারকলিপি অনুমোদন করেন, তাতে আরবীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ করেন এবং জেলায় জেলায় "দরসে কুরআন"-এর মাধ্যমে আরবি শেখানোর প্রস্তাব করেন।[][১০]

পুরস্কার

[সম্পাদনা]

ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম এমেরিটাস অধ্যাপক পদ লাভ করেন। একই বছর ফ্রান্স সরকার তাকে সম্মানজনক পদক নাইট অফ দি অর্ডারস অফ আর্টস অ্যান্ড লেটার্স দেয়। ঢাকা সংস্কৃত পরিষদ তাকে ‘বিদ্যাবাচস্পতি’ উপাধিতে ভূষিত করে। পাকিস্তান আমলে তাকে ‘ প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পদক(১৯৫৮)’ ও মরণোত্তর 'হিলাল ই ইমতিয়াজ খেতাব' প্রদান করা হয়। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্স তাকে সম্মানিত সদস্য (ফেলো) রূপে মনোনয়ন করে কিন্তু পাকিস্তান সরকারের অনুমতি না থাকায় তিনি তা গ্রহণ করেননি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে মরণোত্তর ‘ডি. লিট’ উপাধি দেয়। ১৯৮০ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।তিনি ' চলন্ত শব্দ কল্পদ্রুম ' বলেও পরিচিত ।[১১]

মৃত্যু

[সম্পাদনা]
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র সমাধি

১৯৬৯ সালের ১৩ জুলাই ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পাশে সমাহিত করা হয়। ভাষাক্ষেত্রে তার অমর অবদানকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাতে ঐ বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ঢাকা হলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় শহীদুল্লাহ হল। এছাড়াও তার নামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কলা ভবনের নামকরণ করা হয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "দৈনিক জনকন্ঠ || প্রসঙ্গ ইসলাম ॥ ফুরফুরা শরীফের যুব সংস্কারক"দৈনিক জনকন্ঠ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৪ 
  2. "print | যুগসংস্কারক মওলানা আবু বকর সিদ্দিকী (রহ) | ধর্ম চিন্তা"web.archive.org। ২০১৯-১২-০৩। Archived from the original on ২০১৯-১২-০৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১৪ 
  3. ঘোষ, শুভজ্যোতি (২০১৯-১১-২০)। "সংস্কৃত পড়াতে মুসলিম শিক্ষক নিয়োগের পর বিক্ষোভ"বিবিসি বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৫ 
  4. "ভাঙতে হলে জানতে হয় - Anandabazar"anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৫ 
  5. "এক নজরে কলেজ"ahcollege.gov.bd। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুন ২০১৫ 
  6. জাফরআলী, মো. (১০ জুলাই ২০২০)। "ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কৃতিত্ব ভোলার মতো নয়"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০২১ 
  7. উমর, বদরউদ্দীন (১৯৭০)। "অষ্টম পরিচ্ছেদের চতুর্থ অনুচ্ছেদ"। পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি। আনন্দধারা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ১৮৫ – ১৮৭। ডক্টর শহীদুল্লাহ মূল সভাপতি হিসাবে তাঁর ভাষণে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করেন (১৯৪৮ ৩১শে ডিসেম্বরদুপুর ২ঃ৩০-এ কার্জন হলে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনের প্রথম বৈঠক)। জাতীয় সাহিত্য সম্পর্কে তিনি বলেন: স্বাধীন পূর্ব বাংলার স্বাধীন নাগরিকরূপে আজ আমাদের প্রয়োজন হয়েছে সর্ব শাখায় সুসমৃদ্ধ এক সাহিত্য। এই সাহিত্যে আমরা আজাদ পাক নাগরিক গঠনের উপযুক্ত প্রয়োজনীয় বিষয়ের অনুশীলন চাই। এই সাহিত্য হবে আমাদের মাতৃভাষা বাংলায়। পৃথিবীর কোনো জাতি জাতীয় সাহিত্য ছেড়ে বিদেশী ভাষায় সাহিত্য রচনা করে যশস্বী হতে পারেনি। ইসলামের ইতিহাসের একেবারে গোড়ার দিকেই পারস্য আরব কর্তৃক বিজিত হয়েছিল, পারস্য আরবের ধর্ম নিয়েছিল, আরবী সাহিত্যেরও চর্চা করেছিল। কিন্তু তার নিজের সাহিত্য ছাড়েনি। ১৪ হরফ সমস্যা সম্পর্কে তিনি বলেন: কিছুদিন থেকে বানান ও অক্ষর সমস্যা দেশে দেখা দিয়েছে। সংস্কারমুক্ত ভাবে এগুলির আলোচনা করা উচিত এবং তার জন্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পরামর্শ সমিতি গঠন করা আবশ্যক। যারা পালী, প্রাকৃত ও ধ্বনি তত্ত্বের সংবাদ রাখেন, তারা স্বীকার করতে বাধ্য যে বাংলা বানান অনেকটা অবৈজ্ঞানিক সুতরাং তার সংস্কার দরকার। স্বাধীন পূর্ব বাংলায় কেউ আরবী হরফে, কেউ বা রোমান অক্ষরে বাংলা লিখতে উপদেশ দিচ্ছেন। কিন্তু বাংলার শতকরা ৮৫ জন যে নিরক্ষর, তাদের মধ্যে অক্ষরজ্ঞান বিস্তারের জন্য কি চেষ্টা হচ্ছে? যদি পূর্ব বাংলার বাইরে বাংলাদেশ না থাকতো আর যদি গোটা বাংলা দেশে মুসলমান ভিন্ন অন্য সম্প্রদায় না থাকত, তবে এই অক্ষরের প্রশ্নটা এত সঙ্গীন হত না। আমাদের বাংলা ভাষী প্রতিবেশী রাষ্ট্র ও সম্প্রদায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে হবে। কাজেই বাংলা অক্ষর ছাড়তে পারা যায় না। পাকিস্তান রাষ্ট্র ও মুসলিম জগতের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার প্রয়োজনীয়তা আমরা স্বীকার করি। তার উপায় আরবী হরফ নয়। তার উপায় আরবী ভাষা। আরবী হরফে বাংলা লিখলে বাংলার বিরাট সাহিত্য ভাণ্ডার থেকে আমাদিগকে বঞ্চিত হতে হবে। অধিকন্তু আরবীতে এতগুলি নতুন অক্ষর ও স্বরচিহ্ন যোগ করতে হবে যে বাংলার বাইরে তা যে কেউ অনায়াসে পড়তে পারবে তা বোধ হয় না। ফলে যেমন উর্দু ভাষা না জানলে কেউ উর্দু পড়তে পারবে না, তেমনি হবে বাংলা। শিক্ষা এবং অনুশীলনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন: আমরা পূর্ব বাঙলার সরকারকে ধন্যবাদ দেই যে তাঁরা বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ করে বাংলা ভাষার দাবীকে আংশিকরূপে স্বীকার করেছেন। কিন্তু সরকারের ও জনসাধারণের এক বিপুল কর্তব্য সম্মুখে রয়েছে। পূর্ব বাঙলা জনসংখ্যায় গ্রেট ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, আরব, পারস্য, তুর্কি প্রভৃতি দেশের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এই সোনার বাংলাকে কেবল জনে নয়, ধনে ধান্যে, জ্ঞানে গুণে, শিল্প বিজ্ঞানে পৃথিবীর যে কোনো সভ্য দেশের সমকক্ষ করতে হবে। তাই কেবল কাব্য ও উপন্যাসের ক্ষেত্রে বাংলাকে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল, গণিত, রসায়ন, পদার্থবিদ্যা, ভূতব, জীবতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব, অর্থনীতি, মনোবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব প্রভৃতি জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল বিভাগে বাংলাকে উচ্চ আসন দিতে হবে। তার জন্য শিক্ষার মাধ্যমে স্কুল কলেজ মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয় আগাগোড়া বাংলা করতে হবে। ১৬ এর পর আবার উর্দু শিক্ষার উপরও জোর দিতে গিয়ে তিনি বলেন: আজাদ পাকিস্তানে আমাদের অবিলম্বে শিক্ষা তালিকার সংস্কার করতে হবে। এই নূতন তালিকায় রাষ্ট্রভাষা উর্দুকে স্থান দিতে হবে। যারা এতদিন রাষ্ট্রভাষা রূপে ইংরেজির চর্চা করেছে, তাদের উর্দু শিখতে কি আপত্তি থাকতে পারে। ১৭ মূল সভাপতির ভাষণে ভক্টর শহীদুল্লাহর উপরোক্ত বক্তব্যসমূহ ছাড়াও তাঁর বক্তব্যের যে অংশটি সর্বাপেক্ষা গুরুতর বিতর্কের সৃষ্টি করে তা হলোঃ আমরা হিন্দু বা মুসলমান যেমন সত্য, তার চেয়ে বেশ সত্য আমরা বাঙালী। এটি কোনো আদর্শের কথা নয়, এটি একটি বাস্তব কথা। প্রকৃতি নিজের হাতে আমাদের চেহারায় ও ভাষায় বাঙালীত্বের এমন ছাপ মেরে দিয়েছেন যে, মলা-তিলক-টিকিতে কিংবা টুপি-লুঙি-দাড়িতে ঢাকবার জোটি নেই। ১৮ 
  8. Hashmi, Taj। Fifty Years of Bangladesh, 1971–2021: Crises of Culture, Development, Governance, and Identity (ইংরেজি ভাষায়)। Springer Nature। পৃষ্ঠা 61, 75। আইএসবিএন 978-3-030-97158-8While Fazlur Rahman (1905-1966), a Central Minister from East Bengal, proposed that Bengali be written in Arabic script for the sake of Islamization of the language, Dr Muhammad Shahidullah (1884-1969), renowned Bengali scholar and a linguist, believed that Bengalis could learn Urdu as they learnt English, but he also believed that: "The day Arabic becomes the state language of Pakistan, the creation of the state of Pakistan becomes justified." 84. (Badruddin Umar, Purbo Banglar Bhasha Andolon o Tatkalin Rajniti (Language Movement & Contemporary Politics in East Bengal), Vol 1, Maula Brothers, Dhaka 1970, pp. 180, 256-9, 272.) 
  9. উমর, বদরউদ্দীন (১৯৭০)। "অষ্টম পরিচ্ছেদের চতুর্থ অনুচ্ছেদ"। পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি। আনন্দধারা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ২৮২ – ২৮৪। ৪। আরবীকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাবঃ বাংলা ভাষায় আরবী হরফ প্রচলনের ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি আরবীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্যে দেশের বিভিন্ন স্তরের কিছু ব্যক্তি নিজেদের অভিমত ব্যক্ত করেন। এঁদের মধ্যে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ভূমিকাই সব থেকে উল্লেখযোগ্য এবং ভাষা সম্পর্কে তাঁর অন্যান্ত বক্তব্যের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। তিনি উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ করার এবং বাংলা ভাষায় আরবী হরফ প্রবর্তনের ঘোর বিরোধিতা সত্ত্বেও ধর্মীয় কারণে আরবীর প্রতি একটা বিশেষ দুর্বলতা এর পূর্বেও ব্যক্ত করেছেন। কয়েক বছর পূর্বে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, 'সেদিন পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম সার্থক হইবে, যেদিন আরবী সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা রূপে গৃহীত হইবে। পূর্ব পাকিস্তান আরবী সংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যকারী সমিতি ডক্টর শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বের মাসে পাকিস্তান গণ পরিষদে পেশ করার জন্য একটি খসড়া স্মারকলিপি অনুমোদন করেন। তাতে আরবীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশ এবং শহরের বিভিন্ন কেন্দ্র ও মফঃস্বলে 'দরসে কোরানে'র ব্যবস্থা করার জন্যে সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়। এর পর ১৮ই জানুয়ারি, ১৯৫০, রাজশাহী কলেজের কিছু সংখ্যক ছাত্র আরবীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে কলেজ কমনরুমে একটি সভা আহ্বান করেন। সেখানে প্রাদেশিকতা দূর করার উপায় হিসাবে আরবীকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করা হয়। আরবী ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্যে আইন মোতাবেক আন্দোলন চালানো হবে বলে সেই সভায় একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। ৩ স্টেট ব্যাঙ্কের গভর্নর জাহিদ হোসেনও আরবীকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন এবং তাঁর এই প্রস্তাব সিন্ধু আইন পরিষদের সদস্ত এবং সিন্ধু আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর সৈয়দ আকবর শাহ কর্তৃক সমর্থিত হয়। এই প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন যে আরবী ভাষা প্রবর্তন করলে মুসলিম জাহানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে এবং তার ফল স্বরূপ রাজনৈতিক দিক দিচ্ছে এ দেশ লাভবান হবে। এর পর ১৯৫১ সালের ১ই ফেব্রুয়ারি করাচীতে বিশ্ব মুসলিম সম্মেলনের প্রকাশ্য অধিবেশনে ইসমাইলী সম্প্রদায়ের নেতা আগা খান বলেন যে আরবীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা হলে আরব জাহান, উত্তর আফ্রিকা এবং ইন্দো নেশিয়ার মুসলমানদের মধ্যে সাধারণ যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমি খেয়ালের বশে কোনো কিছু বলিতেছি না। আমি যাহা বলিতেছি তাহা জনসাধারণের এক বিরাট অংশের নিকট অপ্রিয়। কিন্তু তবুও দুনিয়ার মুসলমানদের সম্মুখে আমার মতামত প্রকাশ না করিলে আমার কর্তব্য অসমাপ্ত থাকিবে এবং এছলামের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হইবে। আরবীকে রাষ্ট্রভাষা করার এই সব প্রস্তাব অবশ্য পাকিস্তানের কোনো অংশেই তেমন কোনো সমর্থন লাভ করে নাই। তবে এই দাবী ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশের প্রশ্নের সাথে জড়িত থাকায় তা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রভাষা উর্দু এবং বাংলা ভাষায় আরবী হর। প্রবর্তনের দাবীকে কতকগুলি মহলে জোরদার করে। বিভিন্ন মহলে মারবীকে রাষ্ট্রভাষা করার যে প্রস্তাব উত্থাপিত হয় তার বিরোধিতা করে পাকিস্তান বৌদ্ধ লীগের সেক্রেটারী রবীন্দ্রনাথ বর্মী ১০ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৫১, এক বিবৃতি দেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আরবীর ক্ষান্ত না হয়ে তিনি উর্দুর সমর্থনে ওকালতিও করেন: ৩০২/৪০৫ পাকিস্তান মোছলেম লীগ কাউন্সিল সম্প্রতি এক প্রস্তাবে মারবীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ করিবার জন্য সোপারেণ করিয়াছেন। পাকিস্তানের স্রষ্টা মরহুম কায়েদে আজম এই ঢাকা শহরে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করিয়াছিলেন যে, উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে। কারণ ইংরেজী ভাষার পর উপ-মহাদেশের অধিকাংশ লোকে উর্দু ভাষা সহজে বুঝিতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের কোথাও আরবী ভাষায় কথাবার্তা বলা হয় না। পাকিস্তানের সংবাদপত্র এবং সামরিক পত্রাদিও উর্দুতে প্রকাশিত হয়। আমাদের মনে হয় আরবীর পরিবর্তে উর্দুই রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। সংখ্যালঘু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধির পক্ষে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার ওকালতি নিতান্তই অস্বাভাবিক। একদিকে রাষ্ট্রদ্রোহী আখ্যা লাভের ভয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে দাবী করার অক্ষমতা এবং অম্লদিকে আরবীর মতো একটি সম্পূর্ণ বিদেশী ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণ করার বিপদ এ দুইয়ের ফলেই খুব সম্ভবতঃ রবীন্দ্রনাথ বর্মীর উচু সমর্থন। কিন্তু কারণ যাই যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একজন প্রতিনিধির পক্ষে এ জাতীয় বক্তব্য ৩০৩ / ৪০৫ সুবিধাবাদ ও মেরুদণ্ডহীনতার পরিচায়ক সে বিষয়ে সন্দেহের বিন্দুমাত্র কারণ নেই। - 
  10. উমর, বদরউদ্দীন (১৯৭০)। "প্রথম পরিচ্ছেদের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ"। পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি। আনন্দধারা প্রকাশন। পৃষ্ঠা ৩ – ৫। ২॥ ডক্টর শহীদুল্লাহর অভিমতঃ ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর জিয়াউদ্দীন আহমদ হিন্দীকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার সুপারিশের অনুকরণে উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার সপক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানগতভাবে কোনো প্রতিবাদ কেউ করেনি। মুসলিম লীগ মহলেও এ নিয়ে কোনো বিতর্কের সূচনা হয়নি। কিন্তু জিয়াউদ্দীন আহমদের এই সুপারিশের অসারতা সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তানের জনসাধারণ ও শিক্ষিত সমাজকে অবহিত করার উদ্দেশ্যে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ 'পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা সমস্যা' শীর্ষক একটি প্রবন্ধ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশ করেন। ১ (১২ শ্রাবণ ১৩৫৪ বঙ্গাব্দ, ২৯ জুলাই ১৯৪৭) এ প্রবন্ধে তিনি বলেন: কংগ্রেসের নির্দিষ্ট হিন্দীর অনুকরণে উর্দু পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা রূপে গণ্য হইলে তাহা শুধু পশ্চাদগমনই হইবে।---ইংরেজী ভাষার বিরুদ্ধে একমাত্র যুক্তি এই যে ইহা পাকিস্তান ডোমিনিয়নের কোনো প্রদেশের অধিবাসীরই মাতৃভাষা নয়। উর্দুর বিপক্ষেও একই যুক্তি প্রযোজ্য। পাকিস্তান ডোমিনিয়নের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসীদের মাতৃভাষা বিভিন্ন যেমন— পুষ্তু, বেলুচী, পাঞ্জাবী, সিন্ধী, এবং বাংলা কিন্তু উর্দু পাকিস্তানের কোনো অঞ্চলেই মাতৃভাষারূপে চালু নয়।---যদি বিদেশী ভাষা বলিয়া ইংরেজী ভাষা পরিত্যক্ত হয়, তবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ না করার পক্ষে কোনো যুক্তি নাই। যদি বাঙলা ভাষার অতিরিক্ত কোনো দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা গ্রহণ করতে হয়, তবে উর্দু ভাষার দাবী বিবেচনা করা কর্তব্য। এখানে একটি জিনিস বিশেষভাবে লক্ষণীয়। উর্দুর দাবী বিবেচনার ক্ষেত্রে ডক্টর শহীদুল্লাহ ধর্মের প্রসঙ্গ একেবারেই উত্থাপন করেননি। এক শ্রেণীর লোকে উর্দু'র সপক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন শুধু এই যুক্তিতে যে উদুর সাথে ইসলামের যোগাযোগ বাংলা ভাষার থেকে ঘনিষ্ঠ। শহীদুল্লাহ সাহেব এ ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করেননি। তার মতে আরবী ভাষাই বিশ্বের মুসলমানদের জাতীয় ভাষা।ও সেই হিসাবে তিনি মনে করেন যে আরবী ভাষাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে সমীয় ভাষা হিসাবে উর্দুর কোনো স্থান নেই। ডক্টর শহীদুল্লাহ তার প্রবন্ধটির শেষে বলেন: বাংলা দেশের কোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার পরিবর্তে উর্দু বা হিন্দী ভাষা গ্রহণ করা হইলে ইহা রাজনৈতিক পরাধীনতারই নামান্তর হইবে। ডাঃ জিয়াউদ্দীন আহমদ পাকিস্তানের প্রদেশসমূহের বিদ্যালয়ে শিক্ষার বাহনরূপে প্রাদেশিক ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষার সপক্ষে যে অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন আমি একজন শিক্ষাবিদরূপে উহার তাঁর প্রতিবাদ জানাইতেছি। ইহা কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক শিক্ষা ও নীতি বিরোধীই নয়, প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের নীতি বিগহিতও বটে। এই প্রবন্ধটির পর গুরুর শহীদুল্লাহ ১৭ই পৌষ, ১৩৫৪ (২ জানুয়ারী ১৯৪৮) তকবীর পত্রিকায় 'পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার ভাষা সমতা' নামে আর একটি লেখা প্রকাশ করেন।৬ এই লেখাটিতে তিনি বাংলা, আরবী, উর্দু এবং ইংরেজী ভাষা সম্পর্কে পূর্ব পাকিস্তানীদের নীতি কি হওয়া উচিত সে বিষয়ে আলোচনা করেন। বাংলা সম্পর্কে তিনি বলেন: হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে প্রত্যেক বাঙালীর জন্য প্রাথমিক শিক্ষনীয় ভাষা অবশ্যই বাঙলা হইবে। ইহা জ্যামিতির স্বীকৃত বিষয়ের মাত্র স্বতঃসিদ্ধ। উন্মাদ বাড়াঁত বেছতা ইভার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করিতে পারে না। এই বাংলাই হইবে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক রাষ্ট্রভাষা। আরবী সম্পর্কে তার অভিমত : মাতৃভাষার পরেই স্থান ধর্মভাষার অন্ততঃ মুসলমানের দৃষ্টিতে। এই জন্য আমি আমার প্রাণের সমস্ত জোর দিয়া বলিব, বাংলার রায় আমরা আরবী চাই।--সেদিন পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম সার্থক হইবে, যে দিন আরবী সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা রূপে গৃহীত হইবে। কিন্তু বর্তমানে আরবী পাকিস্তান রাষ্ট্রের একটি বৈকল্পিক ভাষা ভিন্ন একমাত্র রাষ্ট্রভাষা রূপে গ্রহণের যথেষ্ট অন্তরায় আছে। উর্দু শিক্ষ। সম্পর্কে ডক্টর শহীদুল্লাহ বলেন : পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রদেশের জনগণের মধ্যে যোগ স্থাপনের জন্য, যাহারা উচ্চ রাজকর্মচারী কিংবা রাজনীতিক হইবেন, তাঁহাদের জন্ম একটি আন্তঃপ্রাদেশিক (inter-provincial) ভাষা শিক্ষা করা প্রয়োজন। এই ভাষা উচ্চ শিক্ষিতদের জন্য ইংরেজীই আছে। ইহা অনস্বীকার্য বাস্তব ব্যাপার (fict)। কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে ইহা চলে না। উর্দুর আবশ্যকতা আছে। এইজন্য রাজনৈতিক কারণে পাকিস্তান রাষ্ট্রের উচ্চ রাজকর্মচারী ও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী প্রত্যেক নাগরিকেরই উর্দু শিক্ষা করা কর্তব্য। ইংরেজীকে পাকিস্তানের অন্যতম ভাষারূপে চালু রাখার সপক্ষে তিনি নিম্নোক্ত অভিমত প্রকাশ করেন। আমরা পাকিস্তান রাষ্ট্রকে একটি আধুনিক প্রগতিশীল রাষ্ট্ররূপে দেখিতে চাই। তজ্জন্ন ইংরেজী, ফরাসী, জার্মান, ইতালীয়ান, বা রুশ ভাষাগুলিৰ মধ্যে যে কোনো একটি ভাষা আমাদের উচ্চ শিক্ষার পঠিতব্য ভাষারূপে গ্রহণ করিতে হইবে। এই সকলের মধ্যে অবশ্য আমরা ইংরেজীকেই বাছিয়া লইব। ইহার কারণ দুইটি (১) ইংরেজী আমাদের উচ্চ শিক্ষিতদের নিকট স্থপরিচিত; (২) ইংরেজী পৃথিবীর মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক প্রচলিত আন্তর্জাতিক ভাষা। আমি এই ইংরেজীকেই বর্তমানে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে বজায় রাখিতে প্রস্তাব করি। ১০ ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর উপরোক্ত ভাষা বিষয়ক মন্তব্য এবং সুপারিশ গুলির মধ্যে অনেক জটিলতা এবং পরস্পরবিরোধিতা থাকলেও এগুলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এ জটিলতা এবং পরস্পরবিরোধী চিন্তা তাঁর মধ্যেই শুধু ছিলো না। সমসাময়িক রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ এবং জনসাধারণের চিন্তার মধ্যেও এ জটিলতা এবং পরস্পরবিরোধিতা যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান ছিলো। 
  11. বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত, মাওলা ব্রাদার্স
{{bottomLinkPreText}} {{bottomLinkText}}
মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
Listen to this article

This browser is not supported by Wikiwand :(
Wikiwand requires a browser with modern capabilities in order to provide you with the best reading experience.
Please download and use one of the following browsers:

This article was just edited, click to reload
This article has been deleted on Wikipedia (Why?)

Back to homepage

Please click Add in the dialog above
Please click Allow in the top-left corner,
then click Install Now in the dialog
Please click Open in the download dialog,
then click Install
Please click the "Downloads" icon in the Safari toolbar, open the first download in the list,
then click Install
{{::$root.activation.text}}

Install Wikiwand

Install on Chrome Install on Firefox
Don't forget to rate us

Tell your friends about Wikiwand!

Gmail Facebook Twitter Link

Enjoying Wikiwand?

Tell your friends and spread the love:
Share on Gmail Share on Facebook Share on Twitter Share on Buffer

Our magic isn't perfect

You can help our automatic cover photo selection by reporting an unsuitable photo.

This photo is visually disturbing This photo is not a good choice

Thank you for helping!


Your input will affect cover photo selection, along with input from other users.

X

Get ready for Wikiwand 2.0 🎉! the new version arrives on September 1st! Don't want to wait?