For faster navigation, this Iframe is preloading the Wikiwand page for বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব.

বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব

এই নিবন্ধটির একটা বড়সড় অংশ কিংবা সম্পূর্ণ অংশই একটিমাত্র সূত্রের উপর নির্ভরশীল। প্রাসঙ্গিক আলোচনা আলাপ পাতায় পাওয়া যেতে পারে। অনুগ্রহ করে নিবন্ধটির উন্নয়নে বাড়তি তথ্যসূত্র দিয়ে সহায়তা করুন।

বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব বলতে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত যাবতীয় ধ্বনির বিবরণ, এগুলির উচ্চারণ ও ব্যবহারবিন্যাসের আলোচনাকে বোঝায়। বাংলা ভাষার ঔপভাষিক বৈচিত্র্য ব্যাপক এবং বিভিন্ন বাংলা উপভাষার ধ্বনিব্যবস্থাও তাই স্বতন্ত্র।

ধ্বনি প্রকরণ

[সম্পাদনা]

স্বরধ্বনি

[সম্পাদনা]

(অল্প সংবৃত); অ (বেশি সংবৃত); আ; ই (ঈ); উ (ঊ); এ; এ; ও

সব স্বরধ্বনিরই উচ্চারণে হ্রস্বদীর্ঘত্ব আছে। তবে সাধারণ নিয়ম হল হ্রস্ব উচ্চারণ। হ্রস্ব উচ্চারণের উদাহরণের প্রয়োজন নাই। দীর্ঘ উচ্চারণের উদাহরণ দেওয়া হল।

  • : ব (কিন্তু [ব্‌বাই] হ্রস্ব)
  • : সল (কিন্তু [সক্‌লে] হ্রস্ব)
  • আ: থামা (অনুজ্ঞা), দেখা
  • ই (ঈ): স (= সহ্য করি), ভারি (= মুটে; কিন্তু [ভারি] বিশেষণ হ্রস্ব)
  • উ (ঊ): ট (কিন্তু [টের] হ্রস্ব)
  • : কে? (কিন্তু [কে ভাত দাও] হ্রস্ব)
  • : ক (কিন্তু [ক্‌লা] হ্রস্ব)
  • ও: কে? (কিন্তু [কে বসাও] হ্রস্ব)

স্বরধ্বনি

[সম্পাদনা]

বাংলা ভাষাতে ৭টি পূর্ণ স্বরধ্বনি আছে; এগুলিকে অ, আ, ই, উ, এ, ও এবং অ্যা বর্ণ দিয়ে নির্দেশ করা যায়। পূর্ণস্বরধ্বনিগুলিকে নাকি স্বরে বা অনুনাসিকভাবেও উচ্চারণ করা যায় (ঁ দিয়ে নির্দেশ করা হয়)। এছাড়াও বাংলা ভাষাতে অর্ধস্বরধ্বনি আছে চারটি; এগুলি ই, উ, এ এবং ও স্বরধ্বনিগুলির অর্ধোচ্চারিত রূপ। পূর্ণ এবং অর্ধস্বরধ্বনিগুলি একত্রিত হয়ে বাংলায় ১৭টির মত দ্বিস্বরধ্বনি উচ্চারিত হয়; এগুলিকে অয়, অও, আউ, আয়, আও, ইই, ইউ, এই, ছুটে , এও, অ্যায়, অ্যাও, ওই, ওউ, ওয়, ওও দিয়ে নির্দেশ করা যেতে পারে।

লিখিত বাংলার বর্ণমালা, যা স্কুল কলেজে শিক্ষা দেওয়া হয়, সেগুলিতে ঈ, ঊ, ঋ, ৯-এর অস্তিত্ব থাকলেও উচ্চারণের ক্ষেত্রে এগুলি স্বরধ্বনি হিসেবে উচ্চারিত হয় না। দীর্ঘ ঈ এবং দীর্ঘ ঊ সংস্কৃতে দীর্ঘভাবে উচ্চারিত হলেও কথ্য বাংলাতে সবসময় দীর্ঘ উচ্চারিত হয় না। ঋ-কে রি এবং ৯-কে লি হিসেবে উচ্চারণ করা হয়। অন্যদিকে অ্যা স্বরধ্বনিটি বাংলার একটি মৌলিক পূর্ণ স্বরধ্বনি হলেও শিক্ষামাধ্যমে প্রচলিত বর্ণমালাতে একে সেভাবে স্থান দেয়া হয়নি। বাংলা ভাষাতে দ্বিস্বরধ্বনির সংখ্যা সতেরটির মত হলেও কেবল ওই এবং ওউ-এর জন্য আলাদা দুইটি বর্ণ আছে, যথাক্রমে ঐ এবং ঔ, এবং এগুলিকে স্কুলপাঠ্য বর্ণমালার স্বরবর্ণ ভাগে স্থান দেওয়া হয়েছে।

নিচে আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালাতে বাংলা স্বরধ্বনিগুলি উচ্চারণস্থল ও উচ্চারণকৌশল অনুযায়ী ছক আকারে দেখানো হল।

বাংলা স্বরধ্বনি
  সম্মুখ‌জিভ কেন্দ্রীয়‌জিভ পশ্চাৎ‌জিভ
সংবৃতওষ্ঠাধর i ii   u uu
সংবৃত-মধ্যওষ্ঠাধর e   o ouu oi
বিবৃত-মধ্যওষ্ঠাধর অ্যা/এ্যা æ   ɔ
বিবৃতওষ্ঠাধর   a  

ব্যঞ্জনধ্বনি

[সম্পাদনা]

বাংলা ভাষায় মোট ব্যঞ্জনধ্বনি ৩০টি – ক্, খ্, গ্, ঘ্, ঙ্, চ্, ছ্, জ্, ঝ্, ট্, ঠ্, ড্, ঢ্, ত্, থ্, দ্, ধ্, ন্, প্, ফ্, ব্, ভ্, ম্, র্, ল্, শ্, স্, হ্, ড়্, ঢ়্;

যদিও বর্ণমালার ব্যঞ্জনবর্ণ ভাগে আরও ৯ টি বর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে, যেমন—(১)ঞ (২)ণ (৩)য (৪)ষ (৫) য় (৬)ৎ (৭)ং (৮)ঃ (৯)৺

  1. অর্থাৎ ব্যঞ্জনবর্ণ মোট ৩৯ টি

কিন্তু ব্যঞ্জনধ্বনি মোট ৩০ টি

  • বাংলায় ‘ঙ’-এর উচ্চারণ দু’প্রকার।
  1. হলন্ত উচ্চারণে নাসিক্য কন্ঠ্য বর্ণ। যেমন—ব্যাঙ্, রঙ্, ঢঙ্।
  2. স্বরধ্বনির সঙ্গে ‘ঙ’ যুক্ত হলে ‘গ’-ধ্বনির স্পর্শ আসে। যেমন—বাঙালি (বাঙ্গালি), লাঙল (লাঙ্গোল্), রঙিন (রোঙ্গিন্)।
  • বাজতে, সেজদা, মজদুর, রাজধানী প্রভৃতি শব্দের ‘জ’ অনেকটা আইপিএ t͡z বা z-এর মতো। শব্দের মধ্যে হলন্ত অক্ষরে ‘জ’ থাকলে এরূপ উচ্চারণ পাওয়া যায়।
  • ঝাল, ঝোলা, ঝরঝর শব্দে ‘ঝ’-এর উচ্চারণ স্বাভাবিক; কিন্তু ‘বুঝতে হবে’ বাক্যাংশের ‘ঝ’ অনেকটা ‘জ’-এর মতো।
  • ‘ঞ’ বর্ণটি ‘ইঁঅঁ’-র মত উচ্চারিত হয়। ‘চ’-বর্গের কোন বর্ণ সংযুক্ত হলে ‘ঞ’-এর উচ্চারণ দন্ত্য-‘ন’-এর মতো হয়। যেমন—পঞ্চ (পন্‌চো), অঞ্জলি (অন্‌জোলি), বাঞ্ছা (বান্‌ছা)।
  • ‘ণ’ উচ্চারণে ‘ন’-এর সঙ্গে অভিন্ন; তবে ’ট’-বর্গীয় ধ্বনির ঠিক আগে বসলে জিহ্বা উল্টিয়ে মূর্ধন্য-‘ণ’ উচ্চারিত হয়।
  • ‘ড়’ ঘোষ অল্পপ্রাণ তাড়নজাত ধ্বনি ও এর মহাপ্রাণ রূপ ‘ঢ়’। ‘ড’ ও ‘ঢ’-এর মতো ‘ড়’ ও ‘ঢ়’-তে দ্বিত্ব বা ‘য্’-ফলা হয় না।
  • ‘ন’ একটি দন্তমূলীয় বর্ণ।
  • বাংলায় বর্গীয়-‘ব’ অন্তঃস্থ-‘ব’-এর লিপি ও উচ্চারণে পার্থক্য লুপ্ত হয়েছে। সংযুক্ত বর্ণে ব্যঞ্জনবর্ণের পরে ‘ব্’-ফলারূপে সাধারণত অন্তস্থঃ-‘ব’ যুক্ত হয়। ‘ব্’-ফলারূপে এর উচ্চারণ চার প্রকার—
  1. ‘ব্’-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণটির দ্বিত্ব হয়। যেমন—অশ্ব, পঞ্চত্ব, পক্ব।[]
  2. শব্দের প্রথম বর্ণে ‘ব্’-ফলা থাকলে উচ্চারণে শ্বাসাঘাত বা জোর পড়ে। যেমন—ত্বরা, স্বভাব, দ্বীপ।
  3. তৎসম শব্দে ‘হ্’-যুক্ত ‘ব্’-ফলার উচ্চারণ কিছুটা ‘উঅ’ বা আইপিএ w-এর মতো। যেমন—আহ্বান (আওহান্), জিহ্বা (জিউহা)।
  4. একাধিক সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণে ‘ব্’-ফলা যুক্ত হলে ‘ব্’-ফলা অনুচ্চারিত থাকে। যেমন—উচ্ছ্বসিত (উচ্‌ছোশিতো), মহত্ত্ব (মহৎতো), সান্ত্বনা (শান্‌তোনা)।
  • বাংলায় ‘য’-এর উচ্চারণ ‘জ’-এর অনুরূপ। যেমন—যশোদা (জশোদা), যদি (জোদি)। ‘য’ ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে যুক্ত হলে ‘য্’-ফলার উচ্চারণ ছ’প্রকার:
  • ‘য়’-এর উচ্চারণ ‘ইঅ’ বা আইপিএ j-এর মতো।
    • তৎসম শব্দে ‘অ’, ‘আ’, ‘উ’ এবং ‘ও’-বর্ণের পর অবস্থিত ‘য়’ স্পষ্ট শ্রুত হয়। যেমন—সময়, বায়ু, দয়া।
    • তদ্ভব শব্দে ‘এ’-কার এবং ‘ও’-কারের পরে অবস্থিত ‘য়’ অশ্রুত থাকে। যেমন—কেয়া (কেআ), মোয়া (মোআ), কিন্তু ‘আয়া’ ব্যতিক্রম।
  • ‘র’:
    • শব্দের মধ্যে বা শেষে ‘র্’-ফলা যুক্ত হলে সংযুক্ত ব্যঞ্জনবর্ণ উচ্চারণে দ্বিত্ব হয়। যেমন—অপ্রতুল (অপ্‌প্‌রোতুল্), বক্র (বক্‌ক্‌রো)।
    • শব্দের আদি ব্যঞ্জনবর্ণে ‘র্’-ফলা কিংবা অন্যত্র থাকলে ব্যঞ্জনবর্ণের দ্বিত্ব হয় না। যেমন—প্রতুল, সন্ত্রস্ত, ঘ্রাণ।
    • রেফ্-এর উচ্চারণ বেশ শিথিল কিন্তু ‘র্’-ফলার উচ্চারণ কঠিন। সাধু বাংলায় রেফ্ ‘র’-ফলার উচ্চারণ কখনও লুপ্ত হয় না।
  • শব্দের মধ্যে বা অন্ত কোনো ব্যঞ্জনবর্ণে ‘ল্’-ফলা যুক্ত হলে ব্যঞ্জনবর্ণটির দ্বিত্ব হয়। যেমন—বিপ্লব (বিপ্‌প্‌লব্), শুক্ল (শুক্‌ক্‌লো), অশ্লীল (অস্‌স্‌লীল্)।
  • ‘শ’, ‘ষ’, ‘স’—এই তিনটি ধ্বনির উচ্চারণ একরকম ‘শ’ বা আইপিএ ʃ-এর মতো।

    শ, ষ, স-এর শুদ্ধ বা ভদ্র সমাজে প্রচলিত বাংলা উচ্চারণ, ইংরেজির sh-এর মতো—বাংলা ভাষায় কদাচ এগুলোকে ইংরেজির S-র মতো উচ্চারণ করা উচিত নহে।

    — সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়
    • কখনো-কখনো ত, থ, ন, র, ল-এর পূর্বে বসলে ‘শ’ ও ‘স’ দন্ত্য-‘স’ বা আইপিএ s ধ্বনির মতো উচ্চারিত হয়। যেমন—শ্রী (স্‌রী), শ্লীল (স্‌লীল্), সমস্ত (শমোস্‌তো)।
    • শব্দের শুরুতে যুক্তব্যঞ্জনে ক, খ, প, ফ-এর আগে বসা ‘স’ আইপিএ s-এর মত উচ্চারিত হয়। যেমন—স্কন্ধ, স্খলন, স্পর্শ, স্ফূর্তি।
  • ‘ং’-এর উচ্চারণ ‘ঙ্’-এর মত।
  • ‘ঁ’ (চন্দ্রবিন্দু)-এর কাজ স্বরধ্বনিকে অনুনাসিকতা প্রদান করা; এটি কোন ব্যঞ্জনধ্বনি নয়।
  • ‘ৎ’ হল অন্ত্যস্বরবিহীন ‘ত্‌’।
  • ‘ঃ’ হল অন্ত্যস্বরবিহীন ‘হ্’।
বাংলা ব্যঞ্জনধ্বনি
  স্পর্শ অন্তঃস্থ্য
অর্ধস্বর তাড়নজাত কম্পনজাত পার্শ্বিক উষ্ম
অঘোষ ঘোষ ঘোষ ঘোষ ঘোষ ঘোষ অঘোষ ঘোষ
অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ নাসিক্য অল্পপ্রাণ মহাপ্রাণ
কণ্ঠ্য ক্ খ্ গ্ ঘ্ ঙ্, ং হ্
তালব্য চ্ ছ্ জ্ ঝ্ য়্ শ্, ষ্, স্
মূর্ধা ট্ ঠ্ ড্ ঢ্ ণ্ ড়্ ঢ়্ ষ্
দন্তমূলীয় ঞ্, ন্ র্ ল্
দন্ত্য ত্, ৎ থ্ দ্ ধ্ ন্ শ্, স্
ওষ্ঠ্য প্ ফ্ ব্ ভ্ ম্

মান্য চলিত বাংলা উচ্চারণে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে মোটামুটি সমতা বিধান করা হয়, তবে মান্য চলিত ভাষাভাষী বক্তাদের উচ্চারণের ক্ষেত্রেও এলাকাভেদে কিছু বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়:

  • /f/: "ফ" বর্ণটি বক্তাভেদে অঘোষ মহাপ্রাণ ওষ্ঠ্য স্পর্শধ্বনি [pʰ] হিসেবে কিংবা অঘোষ ওষ্ঠ্য উষ্মধ্বনি [ɸ]~[f] হিসেবে উচ্চারিত হতে পারে।
  • অনেক মান্য চলিত বাংলা বক্তার ভাষায় /s/ একটি বহুব্যবহৃত স্বরধ্বনিমূল (সিরকা – সির্‌কা, অস্থির – অস্‌থির্, ব্যস – ব্যাস্ বা বাস্)।
    • অনেক বক্তার উচ্চারণে /s/ এবং /ʃ/ ধ্বনিমূল দুইটি ভিন্নভাবে উচ্চারিত হয় (আস্তে – আস্‌তে, কিন্তু আসতে – আশ্‌তে)। আবার অনেকে এই দুটিকে একই ধ্বনি /s/ দিয়ে উচ্চারণ করেন।
    • কিছু বিদেশী শব্দ যেগুলিতে আদিতে /s/ ধ্বনি ছিল, সেটি মান্য চলিত বাংলাতে [tʃʰ] (পছন্দ – পছোন্‌দো, হিন্দি-উর্দু पसंद/پسند থেকে) কিংবা [ʃ] (সবজি – শোব্‌জি, ফার্সি سبزى থেকে)।
  • /z/: বিদেশী কিছু শব্দের /z/ ধ্বনি বাংলায় [dʒ] উচ্চারিত হয় (সবজি – শোব্‌জি, ফার্সি سبزى থেকে)।
  • /ɽ/: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে প্রচলিত মান্য চলিত বাংলা ভাষার অনেক বক্তা /ɽ/ এবং /r/ ধ্বনি দুইটিকে ভিন্নভাবে উচ্চারণ করেন না। তাদের মুখে পড়ে [pɔɽe]/পরে [pɔre], কড়া [kɔɽa]/করা [kɔra] একই রকম শোনায় (জোড়ার দ্বিতীয় শব্দটির মত)।

অক্ষর/দল/সিলেবল

[সম্পাদনা]

মুখের ভাষার যে অংশ একবারে, এক ধাক্কায় উচ্চারণ করা যায়, সহজভাবে ধ্বনিবিজ্ঞানের পরিভাষায় তাকেই সিলেবল, দল বা অক্ষর বলে। বাংলা ভাষার সিলেবলগুলির কেন্দ্রে বা নিউক্লিয়াসে থাকে একটি স্বরধ্বনি। এই কেন্দ্রের আগে বা পরে শূন্য, এক বা একাধিক ব্যঞ্জনধ্বনি বসতে পারে। অর্থাৎ বাংলা সিলেবলের বিন্যাস স্ব, স্বব, বস্বব, ববস্ব, ববস্বব, ইত্যাদি বিভিন্ন রকমের হতে পারে। সব মিলিয়ে প্রায় পনেরটির মত বিন্যাস পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে বস্ব অর্থাৎ ব্যঞ্জন+স্বর সিলেবলটিই (খা, দু, পা, নি, ইত্যাদি) বাংলা ভাষাতে সবচেয়ে বেশি দেখতে পাওয়া যায়। নিউক্লিয়াসের স্বরধ্বনির আগে সর্বোচ্চ তিনটি ব্যঞ্জন থাকতে পারে, আর নিউক্লিয়াসের পরে সর্বোচ্চ থাকতে পারে দুইটি ব্যঞ্জনধ্বনি। সংকেত আকারে লিখলে বাংলা সিলেবলের সংগঠন এভাবে দেখানো যায়: (C) (C) (C) V (C) (C)। এখানে C ব্যঞ্জন এবং V স্বর নির্দেশ করছে। বন্ধনী দিয়ে বোঝানো হয়েছে C-এর উপস্থিতি ঐচ্ছিক।

উল্লেখ্য খাঁটি বা তদ্ভব বাংলাতে V, CV, VC, CVC --- এই চার ধরনের সিলেবলই মূলত ব্যবহৃত হয়। নিউক্লিয়াসের স্বরধ্বনির আগে বা পরে দুই বা ততোধিক ব্যঞ্জনধ্বনি দেখতে পাওয়া যায় সংস্কৃত থেকে ধার করা তৎসম শব্দে এবং ইংরেজি ও অন্যান্য বিদেশী ভাষা থেকে ধার করা শব্দে। নিচে বাংলায় প্রচলিত সিলেবল বিন্যাসগুলির একটি তালিকা দেওয়া হল।

সিলেবলের গঠন উদাহরণ
V আ (যেমন- মি); ই (যেমন- তি)
CV কি, খা, দে, নে, তু (যেমন- তুমি)
VC এক, ওঠ্‌, আন্‌
CVC কান, চোখ, মুখ, ঢোল, ফুল, পাট, দম, লোক, বের, ফল
CCV শ্রী (বিশ্রী), প্রে (প্রেম), দ্রু (দ্রুতি), প্র (প্রসেসর), ফ্রি
CCVC ঘ্রাণ, প্রাণ, স্নান, ম্লান, ভ্রম, ক্রোশ, ট্রাক, ট্রেন, ক্লিপ, স্কুল, ড্রেন, প্লেন
CCCV স্ত্রী, স্ক্রু
CCCVC স্ত্রীর, স্প্রিং, স্ক্রিন
CVCC এগুলি বিরল।
VV ঐ, আয়, ঔ (ষধ)
CVV বউ, খায়, দেই, হয়
VVC আইন, ঐশ (ঐশ্‌-শরিক = ঐশ্বরিক)
CVVC বৌদ (বৌদ্‌-ধ = বৌদ্ধ), বাইশ, মাইক, লাইন
CCVV ত্রৈ (ত্রৈমাসিক), প্রা (প্রায়)
CCVCC স্টাইল
CCCVV স্ত্রৈ (স্ত্রৈণ), স্ট্রাই (স্ট্রাইকার)

ধ্বনির উপস্থিতির নিয়ম

[সম্পাদনা]
  1. বিদেশী বা তৎসম নয়, এমন বাংলা শব্দের শুরুতে বা শেষে একাধিক ব্যঞ্জন পাশাপাশি বসে না।
  2. বাংলা শব্দের শুরুতে ঙ্‌ বসে না (তুলনীয় ভিয়েতনামীয়, তাগালোগ এবং আফ্রিকার বিভিন্ন ভাষার শুরুতে ব্যবহৃত ঙ ধ্বনি)। ড়, ঢ় দিয়েও শব্দ শুরু হয় না।
  3. বাংলা শব্দের শেষে হ্‌, বসে না।
  4. শব্দ বা সিলেবলের শুরু ছাড়া অন্য কোথাও অ বা অ্যা বসে না।

ধ্বনি পরিবর্তনের নিয়ম

[সম্পাদনা]
এই অনুচ্ছেদটি সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।

স্বরধ্বনির রূপান্তর

[সম্পাদনা]
  1. পরবর্তী সিলেবলের কেন্দ্রে ই বা উ থাকলে
    • পূর্ববর্তী সিলেবলের অ, ও হয়ে যায়। যত (উচ্চারণ জতো), কিন্তু মতি (উচ্চারণ মোতি)।
    • পূর্ববর্তী সিলেবলের অ্যা, এ হয়ে যায়। দেখা (দ্যাখা), কিন্তু দেখি।
    • পূর্ববর্তী সিলেবলের এ, ই হয়ে যায়। লেখা, কিন্তু লিখি।
    • পূর্ববর্তী সিলেবলের ও, উ হয়ে যায়। শোনা, কিন্তু শুনি।
    • ব্যতিক্রম: যদি পূর্ববর্তী সিলেবলের অ-টি একটি উপসর্গের হয়, তবে এর উচ্চারণ পরিবর্তিত হয় না। যেমন- অপূর্ব, সম্পূর্ণ।
  2. শব্দের শুরুতে র-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনের নিহিত অ, ও হয়ে যায়। যেমন- শ্রম (স্রোম্‌), ভ্রম (ভ্রোম্‌), ইত্যাদি। ব্যতিক্রম: ক্রয়।
  3. লিখিত বাংলায় পরের বর্ণে য-ফলা থাকলে আগের বর্ণটির অ, ও হয়ে যায়। যেমন- অরণ্য (অরোন্‌নো), সদ্য (শোদ্‌দো), পর্যন্ত (পোর্‌জোন্‌তো), পথ্য (পোত্‌থো)।
  4. লিখিত বাংলায় পরের বর্ণ ক্ষ বা জ্ঞ হলে আগের বর্ণের নিহিত অ, ও হয়ে যায়। যেমন- বক্ষ (বোক্‌খো), লক্ষ (লোক্‌খো), যজ্ঞ (জোগ্‌গোঁ)।
    • ব্যতিক্রম: যদি পূর্ববর্তী সিলেবলের অ-টি একটি উপসর্গের হয়, তবে এর উচ্চারণ পরিবর্তিত হয় না। যেমন- অজ্ঞ (অগ্‌গোঁ), সংজ্ঞা (শংগাঁ)।
  5. শব্দের মাঝে বা শেষে অবস্থিত নিহিত অ, সবসময় ও উচ্চারিত হয়। যেমন- ছাগল (ছাগোল্‌), প্রধানত (প্রোধানোতো), ভিন্ন (ভিন্‌নো)।
    • ব্যতিক্রম: যদি সিলেবলটি উপসর্গের পরে অবস্থিত শব্দমূল হয়, তবে সেই শব্দমূলের শুরুর অ, ও হয় না। যেমন- বিকল (বিকোল উচ্চারিত হয় না), হৃদয় (হৃদোয় উচ্চারিত হয় না)।

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]
  • আধুনিক বাংলা ব্যাকরণ ও ভাষা বিচিত্রা, নবম ও দশম শ্রেণির জন্য, ডঃ বিশ্বজীবন মজুমদার, ডিসেম্বর ২০০৪ (পুনর্মুদ্রণ জানুয়ারি ২০১০), দে বুক কনসার্ন

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. admin (২০২২-০৫-০৪)। "ব ফলা উচ্চারণের নিয়ম উদাহরণ সহ - সহজ ব্যাখ্যা || বাংলা ব্যাকরণ"SuggestFor (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৭-১৯ 


{{bottomLinkPreText}} {{bottomLinkText}}
বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব
Listen to this article

This browser is not supported by Wikiwand :(
Wikiwand requires a browser with modern capabilities in order to provide you with the best reading experience.
Please download and use one of the following browsers:

This article was just edited, click to reload
This article has been deleted on Wikipedia (Why?)

Back to homepage

Please click Add in the dialog above
Please click Allow in the top-left corner,
then click Install Now in the dialog
Please click Open in the download dialog,
then click Install
Please click the "Downloads" icon in the Safari toolbar, open the first download in the list,
then click Install
{{::$root.activation.text}}

Install Wikiwand

Install on Chrome Install on Firefox
Don't forget to rate us

Tell your friends about Wikiwand!

Gmail Facebook Twitter Link

Enjoying Wikiwand?

Tell your friends and spread the love:
Share on Gmail Share on Facebook Share on Twitter Share on Buffer

Our magic isn't perfect

You can help our automatic cover photo selection by reporting an unsuitable photo.

This photo is visually disturbing This photo is not a good choice

Thank you for helping!


Your input will affect cover photo selection, along with input from other users.

X

Get ready for Wikiwand 2.0 🎉! the new version arrives on September 1st! Don't want to wait?