বশির আহমেদ (বীর প্রতীক)
বশির আহমেদ | |
---|---|
জন্ম | ৩ জুলাই, ১৯৪৯ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
বশির আহমেদ (জন্ম: ৩ জুলাই, ১৯৪৯) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে।[১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]বশির আহমেদের জন্ম ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার দক্ষিণ বল্লবপুর গ্রামে। তার বাবার নাম ছফর আলী খন্দকার এবং মায়ের নাম নূরের নাহার বেগম। তার স্ত্রীর নাম মঞ্জুরা বেগম। তাদের দুই ছেলে, দুই মেয়ে।[২]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করতেন বশির আহমেদ। ১৯৭১ সালে সৈনিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন জয়দেবপুরে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। প্রতিরোধ যুদ্ধ শেষে প্রথমে ৩ নম্বর সেক্টরে, পরে ‘এস’ ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতেই চাকরি করেন। অনারারি ক্যাপ্টেন হিসেবে অবসর নেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত কালেঙ্গা জঙ্গল নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর একদল মুক্তিযোদ্ধা গোপনে অবস্থান করছিলেন। ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে একদল পাকিস্তানি সেনা কালেঙ্গা জঙ্গলে আসে। সেদিন মুক্তিযোদ্ধারা তাদের আক্রমণ করেননি। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের পেতে রাখা মাইনের আঘাতে দু-তিনজন পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। পরদিন পাকিস্তানি সেনারা আবার সেখানে আসে। এদিনও মুক্তিযোদ্ধারা তাদের কোনো বাধা দেননি। ২৪ সেপ্টেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সিন্দুরখান-কালেঙ্গার রাস্তার দুই পাশে অ্যামবুশ পেতে পাকিস্তানি সেনাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তারা আগেই খবর পেয়েছিলেন পাকিস্তানিরা আসবে। মুক্তিযোদ্ধারা পাহাড়ের যেসব স্থানে অবস্থান নিয়েছিলেন, সেখান থেকে অগ্রসরমাণ পাকিস্তানি সেনাদের বেশির ভাগ দেখা যাচ্ছিল। তাদের সামনে ছিল ২২-২৫ জন রাজাকার। মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকারদের ওপর আক্রমণ করেননি। রাজাকাররা কোনো বাধা না পাওয়ায় পাকিস্তানি সেনারা বেশ নিশ্চিত মনে এবং বেপরোয়াভাবে অগ্রসর হচ্ছিল। তারা অ্যামবুশের মধ্যে আসামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা একযোগে আক্রমণ চালান। অ্যামবুশের মধ্যে পড়া বেশির ভাগ পাকিস্তানি সেনা মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে নিহত হয়। তারা প্রতিরোধের কোনো সুযোগই পায়নি। রাস্তার দুই পাশে ছিল ছোট ছোট পাহাড়। অ্যামবুশের জন্য উপযুক্ত স্থান ছিলো। বশির আহমেদসহ একদল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নিলেন পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে। ওত পেতে তারা অপেক্ষা করতে থাকলেন পাকিস্তানি সেনাদের জন্য। পাকিস্তানি সেনারা অস্ত্রের আওতায় আসামাত্র গর্জে উঠল তাদের সবার অস্ত্র। পাকিস্তানি সেনারা প্রতিরোধের কোনো সুযোগই পেল না। নিহত হলো বেশির ভাগ। পাকিস্তানি সেনারা আসছিল বিস্তৃত এলাকাজুড়ে। অনেকে অ্যামবুশের বাইরে ছিল। তারা পাল্টা আক্রমণ চালিয়েও তেমন সুবিধা করতে পারেনি। কারণ, মুক্তিযোদ্ধারা পরিখা খনন করে তার ভেতরে ছিলেন। অ্যামবুশে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একজন অফিসারসহ ৬০-৭০ জন নিহত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে আবদুল মান্নান (বীর উত্তম) শহীদ হন। এই অ্যামবুশে বশির আহমেদ যথেষ্ট সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শন করেন। [৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ২১-০২-২০১২[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৩৯২। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা (দ্বিতীয় খন্ড)। ঢাকা: প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা পৃ ২৫৩। আইএসবিএন 9789849025375।
পাদটীকা
[সম্পাদনা]- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৩-০২-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।
বহি:সংযোগ
[সম্পাদনা]Text is available under the CC BY-SA 4.0 license; additional terms may apply.
Images, videos and audio are available under their respective licenses.