গোলাম মোস্তফা (বীর প্রতীক)
গোলাম মোস্তফা | |
---|---|
মৃত্যু | ২০০০ |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
নাগরিকত্ব | পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে) বাংলাদেশ |
পরিচিতির কারণ | বীর প্রতীক |
গোলাম মোস্তফা (জন্ম: অজানা - মৃত্যু: ২০০০) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
[সম্পাদনা]গোলাম মোস্তফার পৈতৃক বাড়ি সিলেট জেলার সদর উপজেলার কালারুখা গ্রামে। তার বাবার নাম ইব্রাহিম আলী এবং মায়ের নাম আয়েশা বেগম। তার স্ত্রীর নাম খায়রুন নেছা। তাঁদের দুই মেয়ে ও আট ছেলে। [২]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]গোলাম মোস্তফা চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন দিনাজপুর সেক্টরের ১০ উইংয়ে । মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। তিস্তা সেতুর যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভূরুঙ্গমারীতে সমবেত হন। ভূরুঙ্গমারীর পতন হলে ভারতে যান। ভারতে তিনি কিছুদিন প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর প্রথমে ৬ নম্বর সেক্টরের সাহেবগঞ্জ, পরে মোগলহাট সাবসেক্টরে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন। উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ নাগেশ্বরীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ক্যাম্প, ভূরুঙ্গামারী কলেজ, পাটেশ্বরী আক্রমণ প্রভৃতি।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা
[সম্পাদনা]১৯৭১ সালের ১ আগস্ট সীমান্তের ওপারে মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে গুপ্তচর মারফত খবর যায়, নাগেশ্বরী থেকে কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা শেষ রাতে গাড়িতে করে ভুরুঙ্গামারী আসবে। রাতে সাধারণত পাকিস্তানি সেনারা খুব কম চলাচল করে। তবে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মনে হয় এ খবর সঠিক। তারা সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানি সেনাদের অ্যাম্বুশের। শিবিরে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে বাছাই করে দ্রুত প্রায় ৭০ জনের একটি দল গঠিত হয়। মুক্তিযোদ্ধা বেশির ভাগ গণবাহিনীর, কয়েকজন নিয়মিত বাহিনীর। তারা চারটি দলে বিভক্ত। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দলে ২০ জন করে, চতুর্থ দলে ১০ জন। মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক নেতৃত্বে থাকেন গোলাম মোস্তফা ও আখতারুজ্জামান মণ্ডল। মুক্তিযোদ্ধারা অ্যাম্বুশের স্থান নির্ধারণ করেন নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারীর মাঝামাঝি আন্ধারীঝাড় নামক স্থানকে। সেখানে উত্তর দিকে বাঁশঝোপের কাছে পাকা সড়কে তারা অ্যান্টিট্যাংক মাইন বসানোর সিদ্ধান্ত নেন। বাঁশঝোপ থেকে ফুলকুমার নদ সিকি মাইল পশ্চিমে। বিপজ্জনক পরিস্থিতির উদ্ভব হলে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত নদী অতিক্রম করে ওপারে অবস্থান নিতে পারবেন। তৃতীয় দল মধ্যরাতে সড়কে মাইন স্থাপন করে। এরপর গোলাম মোস্তফাসহ মুক্তিযোদ্ধারা অদূরে অপেক্ষায় থাকেন। মাইন বিস্ফোরিত হওয়ামাত্র তারা পাকিস্তানিদের ওপর আক্রমণ চালাবেন। তারপর সময় গড়াতে থাকে। ভোর চারটা বা সাড়ে চারটার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা দূরে একটি গাড়ির হেডলাইটের আলো দেখতে পান।
সঙ্গে সঙ্গে তারা সবাই যে যাঁর কান চেপে ধরেন। এর আড়াই-তিন মিনিটের মধ্যে গগনবিদারী গুড়ুম গুড়ুম শব্দ। চারদিকের মাটি কেঁপে ওঠে। বিকট শব্দে মুক্তিযোদ্ধা সবাই মনে করেন, তাঁদের কানের পর্দা ফেটে গেছে। আকাশ ভেঙে পড়েছে। বাঁশঝোপসহ আশপাশের গাছগাছালিতে থাকা পাখিরা ভয়ে কিচিরমিচির করে আকাশে উড়ে যায়। একটু পর গর্জে ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র। কিন্তু পাকিস্তানিদের দিক থেকে কোনো প্রতি-উত্তর নেই। গোলাম মোস্তফাসহ কয়েকজন এগিয়ে যান। তখন আকাশ কিছুটা ফরসা হয়ে এসেছে। দূরের অনেক কিছু চোখে পড়ে। তারা দেখেন, ঘটনাস্থলে বিরাট গর্ত হয়ে গেছে। কিন্তু সেখানে গাড়ি বা পাকিস্তানি সেনাদের কোনো চিহ্ন নেই। খোঁজাখুঁজির পর দেখেন, একটু দূরে খেতে পড়ে আছে ছিন্নভিন্ন গাড়ির কিছু অংশ ও খণ্ডিত একটি হাত। এর সঙ্গে পোশাকের অংশও আছে। মুক্তিযোদ্ধারা পরে খবর পান, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওই জিপে একজন ক্যাপ্টেনসহ সাত-আটজন ছিল। মাইনের আঘাতে জিপসহ সবাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।[৩]
পুরস্কার ও সম্মাননা
[সম্পাদনা]পাদটীকা
[সম্পাদনা]- এই নিবন্ধে দৈনিক প্রথম আলোতে ১৬-১০-২০১২ তারিখে প্রকাশিত তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না প্রতিবেদন থেকে লেখা অনুলিপি করা হয়েছে। যা দৈনিক প্রথম আলো ক্রিয়েটিভ কমন্স অ্যাট্রিবিউশন-শেয়ার-এলাইক ৩.০ আন্তর্জাতিক লাইসেন্সে উইকিপিডিয়ায় অবমুক্ত করেছে (অনুমতিপত্র)। প্রতিবেদনগুলি দৈনিক প্রথম আলোর মুক্তিযুদ্ধ ট্রাস্টের পক্ষে গ্রন্থনা করেছেন রাশেদুর রহমান (যিনি তারা রহমান নামেও পরিচিত)।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না" | তারিখ: ১৬-১০-২০১২"। ২০২০-০৫-০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-০৬।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা স্মারকগ্রহন্থ। জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৪৭৭। আইএসবিএন 9789843351449।
- ↑ একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (প্রথম খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। এপ্রিল ২০১২। পৃষ্ঠা ৩১৭। আইএসবিএন 9789843338884।
বহি:সংযোগ
[সম্পাদনা]Text is available under the CC BY-SA 4.0 license; additional terms may apply.
Images, videos and audio are available under their respective licenses.