For faster navigation, this Iframe is preloading the Wikiwand page for ওগ্যুস্ত কোঁৎ.

ওগ্যুস্ত কোঁৎ

এই নিবন্ধটির রচনা সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। কারণ ব্যাকরণ, রচনাশৈলী, বানান বা বর্ণনাভঙ্গিগত সমস্যা রয়েছে। আপনি এটি সম্পাদনা করে সাহায্য করতে পারেন। (জানুন কীভাবে ও কখন এই টেমপ্লেট বার্তাটি সরাবেন)
এই নিবন্ধটি অন্য একটি ভাষা থেকে আনাড়িভাবে অনুবাদ করা হয়েছে। এটি কোনও কম্পিউটার কর্তৃক অথবা দ্বিভাষিক দক্ষতাহীন কোনো অনুবাদক কর্তৃক অনূদিত হয়ে থাকতে পারে। অনুগ্রহ করে এই অনুবাদটি উন্নত করতে সহায়তা করুন। যদি এই নিবন্ধটি একেবারেই অর্থহীন বা যান্ত্রিক অনুবাদ হয় তাহলে অপসারণের ট্যাগ যোগ করুন।
ওগ্যুস্ত কোঁৎ
Auguste Comte
১৮৪৯ সালে ওগ্যুস্ত কোঁৎ
জন্ম
ইজিদর ওগ্যুস্ত মারি ফ্রঁসোয়াজ এগজাভিয়ে কোঁৎ

(১৭৯৮-০১-১৯)১৯ জানুয়ারি ১৭৯৮
মোঁপ্যলিয়ে, এরো, ফ্রান্স
মৃত্যু৫ সেপ্টেম্বর ১৮৫৭(1857-09-05) (বয়স ৫৯)
জাতীয়তাফরাসি
শিক্ষা• লিসে জফ্রে
• মোঁপ্যলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
• একোল পোলিতেকনিক
দাম্পত্য সঙ্গীকারোলিন মাসাঁ
উল্লেখযোগ্য অবদান
• দৃষ্টবাদ
• ত্রিপর্ব তত্ত্ব
• বিশ্বকোষীয় নীতি
• দানখয়রাত তত্ত্ব

ওগ্যুস্ত কোঁৎ[টীকা ১] (ফরাসি: Auguste Comte; ১৯শে জানুয়ারি, ১৭৯৮৫ই সেপ্টেম্বর, ১৮৫৭)[] ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন ফরাসি দার্শনিক, নীতিশাস্ত্রবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী। তাঁকে সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে গণ্য করা হয়।[] তিনি সমাজবিজ্ঞানকে একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে সৃষ্টি করতে প্রথমে এই বিজ্ঞানকে সামাজিক পদার্থবিজ্ঞান নামকরণ করেন। পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয় সমাজবিজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞানে প্রথম বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য তিনি স্মরণীয়।

জীবন ও কর্ম

[সম্পাদনা]

ওগ্যুস্ত কোঁতের পিতৃপ্রদত্ত নাম ইজিদর ওগ্যুস্ত মারি ফ্রঁসোয়াজ এগজাভিয়ে কোঁৎ (Isidore Auguste Marie Francoise Xavier Comte)। তিনি ১৭৯৮ সালের ১৯ই জানুয়ারি ফ্রান্সের মোঁপ্যলিয়ে শহরে জন্মগ্রহণ করেন। অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিভা তাঁর মধ্যে দেখা যায়। যৌবনে তাঁর আদর্শ ছিল বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন, যাকে তিনি আধুনিক সক্রেটিস বলে অভিহিত করেন। বিখ্যাত ইউটোপিয়াবাদী সেন্ট সাইমনের সেক্রেটারির পদাভিষিক্ত হয়ে তিনি তার চিন্তাধারার সাথে সম্পৃক্ত হন। অনেকে মনে করেন, সেন্ট সাইমনের সাহচর্যে থাকাকালীন সময়ে অর্থাৎ ১৮১৯ থেকে ১৮২৪ সালের মধ্যে কোঁতের চিন্তাধারা প্রকাশে সাঁ সিমোঁ-র প্রভাব ছিল। তাদের মধ্যে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে মতাদর্শগত কারণে। মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সেই ওগ্যুস্ত কোঁৎ-এর মধ্যে সমাজ পুনর্গঠনের চিন্তা লক্ষ করা যায়। ১৮২২ সালে তিনি সত্যি সত্যি সমাজ পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক কার্যপদ্ধতির পরিকল্পনা তৈরি করেন। সেজন্য ১৮২৬ সালে তিনি এ পরিকল্পনা কাঠামো তৈরি করেন। ১৮৩০ সাল থেকে ১৮৪২ সালের মধ্যে তাঁর 'PositivePhilosophy' গ্রন্থটির ৬টি খণ্ড প্রকাশিত হয় এবং ১৮৩৯ সালে উক্ত গ্রন্থের ৪র্থ খণ্ডে তিনি Sociology শব্দটি ব্যবহার করেন। ১৮৫৪ সালের মধ্যে তাঁর Positive Polity, Positive Vision এর ছয় খণ্ডই প্রকাশিত হয়। তাঁর দার্শনিক ও সমাজতাত্ত্বিক চিন্তা প্রতিফলিত হয়েছে প্রধানত তিনটি বিখ্যাত গ্রন্থে। এই তিনটি গ্রন্থই ফরাসি ভাষায় প্রকাশিত হয়। এই তিনটি গ্রন্থ হলো:

  • Opuscules de philosophie sociale
  • Course de philosophie positive and
  • Systeme de Politique Positive, এ ছাড়াও তাঁর অন্যান্য গ্রন্থ 'Discourse sur lensemble du positivism', 'Traite Philosophiqued', 'Artronomic Populaire' বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

Opuscules-এ কোঁৎ ইউরোপীয় সমাজ ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তাঁর চিন্তার প্রতিফলন, বর্ণনা ও বিশ্লেষণ দিয়েছেন। 'Cours de Philosophie Positive' গ্রন্থে প্রগতির ধারণার ব্যাপকতর পরিধি রচনা করেন এবং 'The System de politique Positive' গ্রন্থে মানব ঐক্যের দার্শনিক ভিত্তি প্রস্তুত করেছেন। মানব ঐক্যের জন্য কোঁৎ মানবতার ধর্মের কথা বলেছেন।

কোঁতের পজিটিভ ভিশন (Positive Vision) শুধু বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ পুনর্গঠন চিন্তাই ছিল না, এটা ছিল একটা ধর্ম। তাঁর চিন্তার গভীরে যে সুপ্ত বাণীটি ছিল তা হলো, সমাজ পুনর্গঠন এমনভাবে করতে হবে যাতে সেখানে বিজ্ঞান সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। তাহলে অহংবাদের উপরে মানুষের মধ্যে বিশ্ব কল্যাণবাদ দেখা দিবে এবং সামাজিক শৃঙ্খলার ভিত্তিতে সামাজিক অগ্রগতি হবে। তিনি বিশ্বাস করতেন বিশ্বে নতুন মানবধর্ম প্রতিষ্ঠিত হবে।

ওগ্যুস্ত কোঁতের জীবন ও চিন্তা-চেতনা ছিল কণ্টকাকীর্ণ এবং অনেক ক্ষেত্রে বিষাদময়। এই বিষাদময় একান্ত ব্যক্তিগত দাম্পত্য জীবন যেমনটা তাকে সীন নদীতে আত্মহত্যার প্রচেষ্টা অতল তলে ডুবিয়ে দিতে চেয়েছিল, তেমনটি আবার 'ক্লথাইল্ড দ্য ভক্স' (Clotilde de Vaux) নামক এক উচ্চবংশীয় ভদ্র মহিলার প্রণয়াসক্ত হয়ে জীবনের কিছুটা সময় চিন্তা ও চেতনায় পুনর্জীবন লাভ তার দীপশিখা জ্বেলে দিতেও সক্ষম হয়েছিল। কিন্তু তাও ছিল ক্ষণস্থায়ী। ক্লথাইল্ডের মৃত্যুর পর কোঁৎ বোধশক্তির থেকে আবেগকে, মনের থেকে অনুভূতিকে এবং পুরোষোচিত কঠোর বুদ্ধিমত্তার থেকে স্ত্রীসুলভ উষ্ণ আবেগ-অনুরাগের ক্ষমতাকে প্রাধান্য দিতে শুরু করেন। ১৮৪৮ সালে 'পজিটিভিস্ট সোসাইটি' নামক একটি সংগঠন গড়ে তোলেন, যার মূলমন্ত্র ছিল মানব প্রচেষ্টায় এবং বিজ্ঞান সাধনায় মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন। এ দর্শনের সাথে পরজাগতিক কোনকিছুর সম্পর্ক নেই; পজিটিভ রাজনীতির মাধ্যমে গোটা ইউরোপকে নিয়ে কমনওয়েলথ গঠন করা ছিল উদ্দেশ্য। এই সংগঠনটি তাঁর পাঠক্রমের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। তাঁর জীবনের বিভিন্ন উত্থান-পতন তাকে যেন মানুষের আরো আপন করে তুলেছিল জীবনের সায়াহ্নে এসে। তাঁর দেশ-বিদেশে অসংখ্য অনুরাগী, ভক্ত ও অনুসারী ছিল। ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে ঊনষাট বছর বয়সে ৫ সেপ্টেম্বর ১৮৫৭ সালের সেপ্টেম্বরের পাঁচ তারিখে ওগ্যুস্ত কোঁৎ পরলোক গমন করেন। জীবনের এই সীমাবদ্ধ পরিসরে তিনি চিন্তাজগতে মৌলিক অবদান রেখে গেছেন।

ওগ্যুস্ত কোঁতের সমাধির প্রস্তরফলক

সমাজবিজ্ঞানের জনক হিসেবে পরিচিতি

[সম্পাদনা]

ফরাসি বিপ্লবের পরবর্তী সময়ের মানুষ হিসেবে ওগ্যুস্ত কোঁৎ তাঁর কৈশোর এবং যৌবনে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে চরম বিশৃঙ্খলা এবং বিপর্যয় অবলোকন করেন। ফরাসি বিপ্লবের ফলে সামন্তবাদীদের অবসান ঘটে। পূর্বের শ্রেণিবৈষম্যজনিত সমাজকাঠামো কিছুটা বিলুপ্ত হয় বটে; কিন্তু সরকার ও প্রশাসনের ভার অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের উপর অর্পিত হওয়ার ফলে সামাজিক পরিস্থিতির মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে। যার পরিণতিতে সমাজে নৈরাজ্য এবং বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

ফরাসি বিপ্লবোত্তর সমাজের স্থিতিশীলতা ও সংহতি ফিরিয়ে আনার প্রয়াস হিসেবে ওগ্যুস্ত কোঁৎ সমাজবিজ্ঞান নামক একটি পৃথক বিজ্ঞানের কথা উল্লেখ করেন এবং সমাজবিজ্ঞানকে একটি স্বতন্ত্র বিজ্ঞান হিসেবে সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি প্রথমে এই বিজ্ঞানকে 'সোশ্যাল ফিজিক্স' (Social Physics) নামকরণ করেন। পরবর্তীকালে এর নামকরণ করা হয় 'সমাজবিজ্ঞান' (Sociology)।

ওগ্যুস্ত কোঁৎ সমাজবিজ্ঞানকে পদার্থবিদ্যার অনুসরণে মানবসমাজের স্থিতিশীলতার বিষয়কে সোশ্যাল স্ট্যাটিক্স (Social Statics) এবং সমাজের গতিশীলতার বিষয়কে সোশ্যাল ডায়নামিক্স (Social Dynamics) এ দু'ভাগে বিভক্ত করেন। সমাজকাঠামো এবং সমাজকাঠামোর স্থিতি ও ঐক্যের অধ্যয়ন ও অনুসন্ধান হলো সোশ্যাল স্ট্যাটিকস-এর আলোচ্যবিষয়। অপরদিকে, সমাজের পরিবর্তন ও প্রগতির সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয়াদির অধ্যয়ন ও অনুসন্ধান হলো 'সোশ্যাল ডায়নামিক্স' এর বিষয়বস্তু। এ প্রসঙ্গে তিনি সমাজের স্থিতিশীল (Static) এবং গতিশীল (Dynamic) বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেন। শৃঙ্খলা বলতে সমাজের স্থিতিশীল এবং প্রগতি বলতে সমাজের গতিশীল দিককে বুঝায়।

ওগ্যুস্ত কোঁতের মতে, সামাজিক স্থিতিশীলতা সমাজের গঠন এবং কাঠামোর সাথে সম্পৃক্ত। অপরদিকে, সামাজিক গতিশীলতা বা চলমানতা মানবসমাজের প্রগতি এবং উন্নতির বিশ্লেষণ করে। তাঁর মতে, সব সমাজেই এ দুটি লক্ষণ দেখা যাবে। কারণ যুগপৎ সমাজ স্থিতিশীল ও গতিশীল। স্থিতিশীলতা বলতে অচল, অনড় অবস্থা বুঝায় না; স্থিতিশীলতা বলতে সুশৃঙ্খল সমাজ বুঝায়। সুশৃঙ্খল সমাজে পরিবর্তন ঘটে নানা কারণে। তবে ধারাবাহিকতা নষ্ট করে দিয়ে নয়, বরং ধারাবাহিকতার সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে। কোঁৎ সুশৃঙ্খল সমাজের পরিবর্তনকে গতিশীলতা বলেছেন। পরিবর্তনশীল জগতে কী কী কারণে সমাজের গতিশীলতা ত্বরান্বিত বা বিলম্বিত হয় এ বিষয়টির বিশ্লেষণের উপরও তিনি আলোকপাত করেছেন। তাঁর মতে, একদল দার্শনিক সামাজিক শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতার উপর অধিক গুরুত্বারোপ করেন। এঁরা রক্ষণশীল ধারণার প্রবক্তা। এ শ্রেণির চিন্তাবিদরা সামাজিক প্রগতি ও গতিশীলতার বিষয়টিকে অগ্রাহ্য করেন। আবার দার্শনিকদের মধ্যে বিপরীতক্রমে সামাজিক প্রগতি ও সমাজের গতিশীলতার উপর অধিক জোর দিতে গিয়ে সামাজিক শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতার বিষয়টিকে অবহেলা করেন। কিন্তু কোঁৎ এর মতে, এ দু'য়ের মধ্যে কোনরকম স্ববিরোধ নেই। তাঁর মতে, সামাজিক শৃঙ্খলা ও স্থিতিশীলতার সাথে সামাজিক প্রগতি ও গতিশীলতার সংযোগ সাধন সম্ভব এবং উভয়ের সহাবস্থান একান্ত ভাবে অপরিহার্য। শৃঙ্খলার সাথে সংহতি বজায় রেখে স্থিতিশীল সমাজকে গতিশীল করা যায় এবং এভাবে শৃঙ্খলার সাথে প্রগতির সামঞ্জস্য সাধন সম্ভবপর হয়। তিনি মনে করেন, সুসংগঠিত ও সুসংহত মানবসমাজের স্বার্থে শৃঙ্খলা এবং প্রগতি উভয়ই অপরিহার্য। প্রগতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, "Progress is the development of order." অর্থাৎ, নিয়ম-শৃঙ্খলার উন্নয়নই হচ্ছে প্রগতি। তাই তিনি মনে করেন, নিয়ম-শৃঙ্খলার উন্নতি হলেই সে সমাজ প্রগতির পথে এগিয়ে যাবে। প্রগতি সম্বন্ধে কোঁতের ধারণা হলো এই যে, বস্তুগত উন্নতির চাইতে অজ্ঞতা ও কুসংস্কার থেকে মানুষের মুক্তি ও তার মধ্যে সামাজিকতাবোধের বেশি প্রয়োজন। প্রগতি মূলত শৃঙ্খলা; স্থিতিশীলতার অর্থে ব্যবহৃত হয়। সামাজিক স্থিতিশীলতা সম্ভব। কেননা মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক উন্নতিতে সক্ষম, একমাত্র মানুষই ভালোবাসার দ্বারা চালিত হয়। উন্নতি বলতে ধর্মীয় চেতনা বিকাশ ও অহংবোধের উপর বিশ্বপ্রেমের স্থান পাওয়াকে বুঝায়। সামাজিক উন্নতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে- এটি চলমান। এ চিন্তার প্রেক্ষাপটে তিনি সমাজের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের যোগসূত্র ক্রমান্বয়ে উন্নতির বিবর্তন হিসেবে দেখিয়েছেন।

ওগ্যুস্ত কোঁৎ সমাজকে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের যোগসূত্র হিসেবে কতকগুলো বাস্তব পদ্ধতি অনুশীলনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। বিমূর্ত নীতি (Abstract principle) বা অনুমাননির্ভর তত্ত্বের (Speculative theories) পরিবর্তে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করে সামাজিক ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করার প্রতি তিনি গুরুত্ব দেন। এ অনুশীলনের ভিত্তি হচ্ছে পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ ও তুলনামূলক পর্যালোচনা। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা এবং গুরুত্ব সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণ অবহিত ছিলেন। অর্থাৎ বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই সমাজ সম্পর্কিত বিষয়সমূহের স্বরূপ নির্ণয় করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। প্রাসঙ্গিকভাবে এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, একদিকে তাঁর পদ্ধতি বিজ্ঞানে প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গির যেমন পরিচয় মেলে তেমনি আবার তাঁর দৃষ্টবাদী বিবর্তনবাদ রক্ষণশীল চিন্তাধারা হিসেবে অভিহিত। কোঁৎ প্রদত্ত পদ্ধতি বিজ্ঞানে বিচিত্র প্রবণতা বিদ্যমান থাকায় তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিকে খণ্ডিত বলা যায় না।

দৃষ্টবাদী সমাজবিজ্ঞানী

[সম্পাদনা]

ওগ্যুস্ত কোঁৎ দৃষ্টবাদের ব্যাখ্যায় বলেন, পৃথিবীটা বহুবিধ অপরিবর্তনীয় প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা শৃঙ্খলার কাঠামোয় বিন্যস্ত। মানবসমাজকে পরিবর্তনের অপরিবর্তনীয় সূত্রটি আবিষ্কার করে কিভাবে সমাজকে সুসংগঠিত এবং স্থিতিশীল করে প্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তা ছিল দৃষ্টবাদের মৌল উদ্দেশ্য। আর এ লক্ষ্য অর্জন করতে জ্ঞানের যে শাখার প্রয়োজন, তা হলো সমাজবিজ্ঞান। তিনি বলেন, সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে এমন একটি জ্ঞানের শাখা, যার মাধ্যমে যৌক্তিক ধারণা ও বৌদ্ধিক চিন্তাকে কেন্দ্র করে মানবজীবন তথা মানবসমাজের অগ্রগতি সাধনের দিকনির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়।

ওগ্যুস্ত কোঁৎ তাঁর যুগ পর্যন্ত জ্ঞানের সমগ্র বিকাশের একটা ইতিহাস তৈরির চেষ্টা করেন। এ প্রচেষ্টায় ইতিহাসের যে ব্যাখ্যা তিনি উপস্থাপন করেন সে ব্যাখ্যাকে দৃষ্টবাদ বলে আখ্যায়িত করেন। ওগ্যুস্ত কোঁৎ মনে করেন যে, দৃষ্টবাদ বিজ্ঞানসম্মত। কারণ পৃথিবী এক অমোঘ অপরিবর্তিত প্রাকৃতিক নিয়ম-শৃঙ্খলার দ্বারা পরিচালিত এবং এসব নিয়মকে কেবল বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা সম্ভব। এভাবেই দৃষ্টবাদ প্রয়োজনীয় জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত। ওগ্যুস্ত কোঁতের ধারণায় দৃষ্টবাদ কেবল সেসব ঘটনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ যেসব ঘটনায় পরিণাম দর্শন সম্ভব। কোঁতের দৃষ্টবাদের ধারণায় বিজ্ঞানসম্মত প্রায়োগিক ও নৈতিক দিক যেমনটি রয়েছে ঠিক তেমনটি রয়েছে বৃদ্ধিবৃত্তি সংক্রান্ত মানবসমাজের উন্নতি সাধনার দিকনির্দেশনা। সেজন্য তিনি মানুষ ও সমাজ সম্পর্কে ধর্মতাত্ত্বিক ও অধিবিদ্যাসংক্রান্ত ধ্যান-ধারণা বর্জন করেছিলেন। তিনি বলেন, সমাজবিজ্ঞানে অবৈজ্ঞানিক যুক্তি, ধ্যান-ধারণা ও সিদ্ধান্তের স্থান ও গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাঁর মতে, বিপ্লব বা বিদ্রোহ চরম সংকটকালীন সমাজের পুনর্গঠনে মোটেই সাহায্য করে না বা মানবমনের ক্ষোভ প্রশমিত করার সমাধান দেয় না। সমাজ পুনর্গঠন সম্ভব শুধু বিভিন্ন বিজ্ঞানের সমন্বয় এবং সংশ্লেষণের মাধ্যমে এবং দৃষ্টবাদী রাজনীতি সৃষ্টির মাধ্যমে। যদিও কোঁৎ এর এ দৃষ্টবাদকে অনেকে সমালোচনা করে বলেছেন, তিনি দৃষ্টবাদ এর ধারণায় শাশ্বত সত্যকে আপেক্ষিক সত্যের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। তা সত্ত্বেও কোঁতের দৃষ্টবাদকে সমাজ পুনর্গঠনের হাতিয়ার হিসেবে মনে করা যায়। কারণ সমাজ পুনর্গঠন করার নৈতিক দৃষ্টিকোণ 'অন্যের জন্য জীবন' এ মূল বক্তব্য তুলে ধরে। তিনি দৃষ্টবাদী বিজ্ঞানের বিশেষ করে সামাজিক বিজ্ঞানের তাত্ত্বিক এবং প্রবক্তা ছিলেন। এই বিজ্ঞানকেই তিনি সমাজবিজ্ঞান নামকরণ করেন।

ত্রয়োস্তরের সূত্র: ওগ্যুস্ত কোঁতের সমাজতাত্ত্বিক ধারণা বিকাশে অন্যতম অবদান হচ্ছে ত্রয়োস্তরের সূত্র। এ সূত্রে মানবজ্ঞানের ক্রমোন্নতি এবং সমাজের উন্নতি ও ক্রমবিকাশে বিবর্তনিক ব্যাখ্যা করা হয়। এ স্তরের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে মানুষের মৌলিক ধারণা তিনটি বৈবর্তনিক পর্যায় অতিক্রান্ত করেছে, যথা: ধর্মীয় যুগের স্তর, অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তর ও দৃষ্টবাদ। অর্থাৎ ওগ্যুস্ত কোঁৎ মনে করেন যে, মানুষের জ্ঞান ও বুদ্ধি প্রথমে ধর্মীয় বা থিউলজিক্যাল ধারণা থেকে উৎপন্ন হয়ে অধিবিদ্যাগত বা মেটাফিজিক্যাল হয়ে দৃষ্টবাদে বা পজিটিভিজমে আসে। সে অনুযায়ী তিনি মনে করেন, সমাজবিজ্ঞানের পরিধি এবং এর বিষয় সন্ধানের পদ্ধতি হবে নিরীক্ষণ, পর্যবেক্ষণ ও সামঞ্জস্যের মাধ্যমে।

ধর্মতত্ত্ব সম্বন্ধীয় স্তর থেকে অধিবিদ্যা সম্বন্ধীয় স্তর হয়ে দৃষ্টবাদে আসতে যে ধ্যান-ধারণা অতিক্রম করতে হয় তা সম্মিলিতভাবে জ্ঞানের উৎস হিসেবে কাজ করে। ওগ্যুস্ত কোঁতের মতে, মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তনের সাথে সাথে অনিবার্যভাবে সমস্ত সমাজই এই তিনটি পর্যায়ের ভিতর দিয়ে অভিব্যক্তি লাভ করে। তাঁর মতে, প্রথম দিকে মানুষ সকল ঘটনাবলির উৎস ঐশ্বরিক শক্তিতে আরোপ করতো। প্রথমত, অতিপ্রাকৃত শক্তিতে বিশ্বাস; দ্বিতীয়ত, বহু দেব-দেবীর অস্তিত্ব স্বীকার এবং পরিশেষে একেশ্বরবাদের বিশ্বাস গড়ে উঠে। এরপর তাদের সকল উৎসের ঐশ্বরিক শক্তির ধারণা অধিবিদ্যাগত চিন্তায় রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ বিমূর্ত নীতি এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা সমাজ ও সামাজিক ঘটনাবলি নিয়ন্ত্রিত হয়, এই ধারণা প্রাধান্য পায়। দৃষ্টবাদী স্তরে যুক্তি এবং পর্যবেক্ষণ হচ্ছে জ্ঞানের উৎস। কোঁতের মতে, এ পর্যায়ে সামাজিক ঘটনাবলিকে বিজয়গত উপায়ে বিশ্লেষণ করার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়। যুক্তির ভিত্তিতে সবকিছু যাচাই করা দৃষ্টবাদ চিন্তার বৈশিষ্ট্য। সেজন্য ওগ্যুস্ত কোঁৎ মনে করেন যে, এ ত্রয়োস্তরের মধ্য দিয়ে চিন্তার পরিবর্তন সমাজব্যবস্থায় প্রতিফলিত হয়।

কোঁৎ মনে করেন যে, দৈবশক্তির প্রাধান্য মেনে নেয়ার অর্থই হলো সবকিছু সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহনির্ভর বলে স্বীকার করা। এরূপ মনোভাব সামরিক মেজাজ বিশিষ্ট রাজতন্ত্রের সৃষ্টির সহায়ক এবং মূলত এ স্তরে সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠার সাথে সাথে পুরোহিতদের প্রাধান্য গড়ে উঠে। এরপর প্রকৃতিপ্রদত্ত অধিকার, প্রাকৃতিক আইন, মানুষের কাল্পনিক ও বস্তুনিরপেক্ষ শক্তিসমূহে বিশ্বাস প্রভৃতি ধারণার সৃষ্টি হয়। এরূপ মনোভাবের ফলে সুসংগঠিত এবং আইনসম্মত শাসনব্যবস্থা, সামরিক মনোভাবসম্পন্ন সামন্ত সমাজকাঠামো ও রাজতন্ত্রভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে উঠে। এ পর্যায়কে কোঁৎ আইনভিত্তিক ও আনুষ্ঠানিক সমাজ (Legalistic and formal society) বলে আখ্যায়িত করেন এবং তৃতীয় স্তরে দৃষ্টবাদমূলক চিন্তার প্রভাবে আধুনিক শিল্পযুগের সূচনা হয়। এ সময় দৃষ্টবাদী (Positivist) চিন্তাধারার বিকাশ ও বিস্তার ঘটে। এ স্তরে বিজ্ঞানসম্মত চিন্তাধারা বিকশিত হয়ে শিল্প যুগের সূচনা ঘটে এবং দৃষ্টবাদী মানবসভ্যতার মূলভিত্তি হলো এ শিল্প সভ্যতা। শিল্পনির্ভর সমাজে দৃষ্টবাদী নীতির প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়। তার ফলে সমাজে শৃঙ্খলা ও প্রগতির মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয়।

মানব ঐক্যের প্রবক্তা

[সম্পাদনা]

ওগ্যুস্ত কোঁৎ মানব ঐক্যের প্রবক্তা। তাঁর 'The System de Politique Positive' শীর্ষক শেষ গ্রন্থে মানব ঐক্যের দার্শনিক ভিত্তি প্রস্তুত করেছেন। কোঁৎ মনে করেন, যেভাবে ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা অতীত সমাজব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে তেমনি আধুনিক সমাজব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করবে বৈজ্ঞানিক ধ্যান-ধারণা।

কোঁৎ জীবন সায়াহ্নে এসে 'পজিটিভিজমকে' মানবতার ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। মানবতার ধর্মের কথা বলতে গিয়ে কোঁৎ যে ধারণাটির উপর জোর দিয়েছেন তা হলো 'মানব ঐক্য'। তাঁর মতে, মানবসমাজের বিবর্তনের দৃষ্টবাদী পর্যায়ে মানবতার ধর্মের সৃষ্টি মানব ঐক্য সম্পাদনে সফল হবে। এ প্রসঙ্গে রেমন্ড অ্যারন বলেন, "I have said, Comte is the sociologist of human unity and one of the possible if not inevitable, results of this sociology of human unity is the religion of human unity." (Raymond Aron : 1987 : 109)। কোঁৎ বলেন, একমাত্র ঐক্যের অভাবে মানবিক মূল্যবোধ নেই এবং মানবিক মূল্যবোধের অভাবে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা নেই। আর তাই তিনি হারিয়ে যাওয়া ঐক্য ফিরিয়ে আনার জন্য একটি নির্দিষ্ট ধর্মের কথা বলেছেন। তা হলো 'মানবতার ধর্ম' (Religion of human unity)। মানবসমাজের নৈরাজ্য ও অস্থিতিশীলতা দূর করা এবং সামাজিক পুনর্গঠনকে সুনিশ্চিত করাই হলো কোঁতের সামাজিক চিন্তা- ভাবনার মূল লক্ষ্য।

কোঁৎ-এর এই নতুন ধর্মে ঈশ্বরের পরিবর্তে মানবতাকে স্থান দিয়েছেন। অর্থাৎ এ ধর্মে ঈশ্বরের প্রশংসা না করে মানবতা ও সরকারি সেবকদের প্রশংসা করতে হবে। এখানে যারা পুরোহিতের দায়িত্বে থাকবে তারা বিজ্ঞানের সব শাখায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে এবং বৈজ্ঞানিকদের বুদ্ধিবৃত্তিক স্বার্থগুলো সমাজের কল্যাণে ব্যয়িত হবে। এ কারণে কোঁৎ-এর প্রত্যেক পুরোহিত হবে একজন সমাজবিজ্ঞানী।

কোঁতের বিশ্বজনীন ভালোবাসা ও মানবতার ধর্ম তাঁর কর্মজীবন ও চিন্তাজগতে চমক সৃষ্টি করলেও আধুনিক সমাজতাত্ত্বিকরা অবশ্য নীতি ও নৈতিকতার সমাজবিজ্ঞান রচনার প্রয়াস ত্যাগ করেছেন। আধুনিক সমাজতাত্ত্বিকগণ মনে করেন, কোঁৎ এর মানবতার ধর্ম সমাজবিজ্ঞানের বিষয়গুলোকে ধর্ম বিশ্বাসের মর্যাদা দিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। ফলে এর মাধ্যমে যুক্তির সাথে আবেগের সমন্বয় ঘটেছে।

মূল্যায়ন

[সম্পাদনা]

সমাজতাত্ত্বিক চিন্তাধারার ক্রমবিকাশে কোঁৎ এর মূল্যায়ন করার সময় তার চিন্তার কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করা হলো:

প্রথমত, ওগ্যুস্ত কোঁৎ 'সমাজবিজ্ঞান' শব্দটির প্রবর্তক। সমাজবিজ্ঞান শব্দটি ব্যবহার করে সমাজবিজ্ঞানকে 'সামাজিক বিজ্ঞানের রানী' হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় সমাজকে একটা গঠনতন্ত্র হিসেবে ভাবা এবং সমাজের অংশসমূহকে এ প্রক্রিয়ায় পরস্পর নির্ভরশীল অঙ্গ বলে গণ্য করা তাঁর মৌলিক চিন্তার সাক্ষর বহন করে।

দ্বিতীয়ত, তিনি সমাজবিজ্ঞানকে সোশ্যাল স্ট্যাটিকস ও সোশ্যাল ডায়নামিকস এ দু'ভাবে বিভক্ত করার মাধ্যমে বুঝাতে চেয়েছেন যে, সমাজকে যুগপৎ স্থিতিশীল এবং গতিশীল বলে ভাবা যায়।

তৃতীয়ত, ইউটোপীয় সমাজচিন্তাবিদ সাঁ সিমো এর প্রভাবে সমাজ বিকাশের তিনস্তরের সূত্র অনুযায়ী মানুষের ধারণা এবং জ্ঞানের প্রতিটি শাখা বিকাশের একটা ইতিহাস তৈরির প্রচেষ্টা সমাজতাত্ত্বিক আলোচনার ক্রমবিকাশে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।

চতুর্থত, বিমূর্ত নীতি (Abstract principles) বা অনুমাননির্ভর তত্ত্বের (Speculative theories) পরিবর্তে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি প্রয়োগ করে সামাজিক ঘটনাবলিকে বিশ্লেষণ করার উপর গুরুত্ব দেন। পর্যবেক্ষণ (Observation), পরীক্ষা- নিরীক্ষা (Experimentation) এবং তুলনামূলক বিচার (Comparison) সমাজবিজ্ঞানের এই তিনটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা এবং গুরুত্ব সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণ অবগত ছিলেন। ফলে সমাজবিজ্ঞানের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

পঞ্চমত, ওগ্যুস্ত কোঁৎ যদিও বৌদ্ধিক উৎকর্ষের ক্রমবিকাশে তাঁর যুক্তিসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির উপর জোর দিয়েছিলেন কিন্তু তিনি মূলত তাঁর দার্শনিক মতবাদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন। তাঁর কল্পিত সমাজব্যবস্থায় ভালো-মন্দ যাই হোক না কেন সবকিছু বিনা তর্কে না মেনে গত্যান্তর নেই। কারণ যে নিয়মের দ্বারা সমাজের পর্যায়ক্রমিক অভিব্যক্তি ঘটে তা অমোঘ মানুষের নিয়ন্ত্রণাতীত। সুতরাং কোঁৎ এর নিকট স্বাধীনতা, অধিকার, সাম্য, জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রভৃতি আদর্শ এবং নীতি নিরর্থক ও অপ্রাসঙ্গিক। (পরিমল ভূষণ কর: ১৯৯২ ৪৩) অনেকে কোঁৎ এর দৃষ্টবাদের সমালোচনা করেছেন, তা সত্ত্বেও কোঁতের দৃষ্টবাদের ধারণায় বিজ্ঞানসম্মত প্রায়োগিক ও নৈতিক দিক যেমনটি রয়েছে ঠিক তেমনি রয়েছে বুদ্ধিবৃত্তি সংক্রান্ত মানবসমাজের উন্নতি সাধনের দিকনির্দেশনা।

পরিশেষে বলা যায়, কোঁৎ-এর সমাজতাত্ত্বিক চিন্তা সমাজ বিশ্লেষণে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রসারতা ঘটিয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর দৃষ্টবাদী দর্শনের প্রতি বুদ্ধিজীবী মহলের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। বিশেষকরে অনেক নেতৃস্থানীয় প্রকৃতি বিজ্ঞানী নিজেদের দৃষ্টবাদী বলে একই ধারণার দাবি করতে থাকেন। এছাড়া আধুনিক বুর্জোয়া সমাজবিজ্ঞানীগণ ওগ্যুস্ত কোঁতের অধিকাংশ ধ্যান-ধারণার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন, যার আলোচনা এখনও অব্যাহত রয়েছে।

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. এই ফরাসি ব্যক্তিনামটির বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে উইকিপিডিয়া:বাংলা ভাষায় ফরাসি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ-এ ব্যাখ্যাকৃত নীতিমালা অনুসরণ করা হয়েছে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "ওগ্যুস্ত কোঁৎ (১৭৯৮-১৮৫৭)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-২১ 
  2. "জেনে নিন কে কোন বিষয়ের জনক"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-২১ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
{{bottomLinkPreText}} {{bottomLinkText}}
ওগ্যুস্ত কোঁৎ
Listen to this article

This browser is not supported by Wikiwand :(
Wikiwand requires a browser with modern capabilities in order to provide you with the best reading experience.
Please download and use one of the following browsers:

This article was just edited, click to reload
This article has been deleted on Wikipedia (Why?)

Back to homepage

Please click Add in the dialog above
Please click Allow in the top-left corner,
then click Install Now in the dialog
Please click Open in the download dialog,
then click Install
Please click the "Downloads" icon in the Safari toolbar, open the first download in the list,
then click Install
{{::$root.activation.text}}

Install Wikiwand

Install on Chrome Install on Firefox
Don't forget to rate us

Tell your friends about Wikiwand!

Gmail Facebook Twitter Link

Enjoying Wikiwand?

Tell your friends and spread the love:
Share on Gmail Share on Facebook Share on Twitter Share on Buffer

Our magic isn't perfect

You can help our automatic cover photo selection by reporting an unsuitable photo.

This photo is visually disturbing This photo is not a good choice

Thank you for helping!


Your input will affect cover photo selection, along with input from other users.

X

Get ready for Wikiwand 2.0 🎉! the new version arrives on September 1st! Don't want to wait?