নিউক্লিয়াস ও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ
নিউক্লিয়াস ও স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে জড়িত একটি ক্ষুদ্র সত্ত্বা যারা দীর্ঘসময় গোপনে কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছিলো বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
গঠন
[সম্পাদনা]পূর্বপাকিস্তান ছাত্রলীগের মধ্যে সুস্পষ্ট দু’টি ধারা বিদ্যমান ছিল। একটি ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে নিজস্ব রাজনীতির ধারা এবং অপর অংশের ঝোঁক ছিল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রতি। সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী নিজস্ব রাজনীতির ধারার তিনজন ছাত্রনেতা ১৯৬২ সালে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে গোপন সংগঠন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ গঠন করেন। তিন সদস্যের এই ক্ষুদ্র সত্তা পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের ‘নিউক্লিয়াস’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। নিউক্লিয়াসের তিনজন সদস্য ছিলেন সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও কাজী আরেফ আহমেদ।
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
[সম্পাদনা]নিউক্লিয়াসের কাজ ছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ্যে যাবতীয় নীতি-কৌশল প্রণয়ন করা এবং স্বাধিকার আন্দোলনকে সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাওয়া। স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সর্বময় কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা ছিল এই তিন ছাত্রনেতার কাছে। দেশের ছাত্র আন্দোলনের প্রতিটি কর্মসূচি বিশেষত শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত ছয় দফা, ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের এগারো দফার আন্দোলনসহ প্রতিটি আন্দোলনকে গণরূপদানের মাধ্যমে স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলা। একইসাথে জাতিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করা ছিল নিউক্লিয়াসের অন্যতম কাজ। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি, ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা উত্তোলন, ৩ মার্চ স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ, জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন, জয়বাংলা বাহিনী গঠন এবং তার কুচকাওয়াজ ও শেখ মুজিবুর রহমানকে সামরিক অভিবাদন জানানো, সবই ছিল স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ। বিপ্লবী পরিষদের সকল কর্মকাণ্ডের প্রতি শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন ছিল।
গৃহীত কার্যক্রম
[সম্পাদনা]নিউক্লিয়াসের সিদ্ধান্তে ১৯৬৪ সালে কাজী আরেফ আহমেদের পৈত্রিক নিবাস পুরনো ঢাকার ১৪/৩ অভয় দাস লেনের বাড়িতে একটি সাইক্লোস্টাইল মেশিন স্থাপন করা হয়। এ মেশিনে মূদ্রিত ‘জয়বাংলা’ ও ‘বিপ্লবী বাংলা’[৪] নামে স্বাধীনতার ইশতেহার[৪] প্রচার করা হতো। নির্দেশ ছিল যে এ ইশতেহার পড়ার পর পুড়িয়ে বা ছিঁড়ে ফেলতে হবে। নিউক্লিয়াস সদস্যদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাকের অন্যতম দায়িত্ব ছিলো শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে নিউক্লিয়াসের কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত রাখা। কাজী আরেফের দায়িত্ব ছিলো স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সংগঠন গড়ে তোলা। শরীফ শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে বাষট্টি সালে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলন, শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত বাঙালির মুক্তির সনদ ছেষট্টির ছয় দফার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, সত্তরের সাধারণ নির্বাচন , ৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষন, শেখ মুজিবুর রহমানকে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান, নিউক্লিয়াস'র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তৈরি, আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন, স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ সর্বোপরি বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধসহ এ সকল কর্মকাণ্ডই ছিলো 'নিউক্লিয়াস'[৫] বা 'স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অংশ। আর এ সকল কর্মসূচির পরিকল্পনা প্রণীত হতো নিউক্লিয়াসের মাধ্যমে।
সদস্য সংগ্রহ
[সম্পাদনা]ছাত্রলীগের অভ্যন্তরের প্রগতিশীল অংশের মধ্যে থেকে প্রতিশ্রুতিশীল কর্মী সংগ্রহ করে সারাদেশে একটি সাংগঠনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়। ১৯৬২ সাল থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত নিউক্লিয়াসের সাংগঠনিক তত্ত্বাবধানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে প্রায় সাত হাজার (৭০০০)সদস্য সংগৃহীত হয়।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]Text is available under the CC BY-SA 4.0 license; additional terms may apply.
Images, videos and audio are available under their respective licenses.