For faster navigation, this Iframe is preloading the Wikiwand page for সিরাজ সিকদার.

সিরাজ সিকদার

এই নিবন্ধে একাধিক সমস্যা রয়েছে। অনুগ্রহ করে নিবন্ধটির মান উন্নয়ন করুন অথবা আলাপ পাতায় বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করুন। এই নিবন্ধটির নিরপেক্ষতা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। প্রাসঙ্গিক আলোচনা আলাপ পাতায় পাওয়া যেতে পারে। অনুগ্রহ করে বিতর্ক নিরসন হওয়ার আগ পর্যন্ত এই টেমপ্লেটটি সরিয়ে ফেলবেন না। (জানুয়ারি ২০১৯) এই নিবন্ধটি এমনভাবে লেখা হয়েছে যে মনে হচ্ছে এটি একটি ব্যক্তিগত ভাবনা বা মতামত সম্বলিত রচনা এবং হয়তো নিবন্ধটির পরিচ্ছন্নকরণ প্রয়োজন। অনুগ্রহ করে নিবন্ধটিকে বিশ্বকোষীয় শৈলীতে পুনরায় লিখে এর মানোন্নয়নে সহায়তা করুন। (জানুয়ারি ২০১৯) এই নিবন্ধটির বর্ণনা ভঙ্গি উইকিপিডিয়ার বিশ্বকোষীয় বর্ণনা ভঙ্গি প্রতিফলিত করেনি। এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট আলোচনা আলাপ পাতায় পাওয়া যেতে পারে। নির্দেশনা পেতে সঠিক নিবন্ধ লেখার নির্দেশনা দেখুন। (জানুয়ারি ২০১৯) এই নিবন্ধের যাচাইযোগ্যতার জন্য অতিরিক্ত তথ্যসূত্র প্রয়োজন। অনুগ্রহ করে নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র সংযোজন করে নিবন্ধটির মান উন্নয়নে সহায়তা করুন। তথ্যসূত্রবিহীন বিষয়বস্তুসমূহ পরিবর্তন কিংবা অপসারণ করা হতে পারে।উৎস খুঁজুন: "সিরাজ সিকদার" – সংবাদ · সংবাদপত্র · বই · স্কলার · জেস্টোর (জানুয়ারি ২০১৯) (জানুন কীভাবে ও কখন এই টেমপ্লেট বার্তাটি সরাবেন)
সিরাজুল হক সিকদার
জন্ম(১৯৪৪-১০-২৭)২৭ অক্টোবর ১৯৪৪
মৃত্যু২ জানুয়ারি ১৯৭৫(1975-01-02) (বয়স ৩০)
মৃত্যুর কারণহত্যা
সমাধিমোহাম্মদপুর কবরস্থান
জাতীয়তাবাংলাদেশী
শিক্ষাবিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং
মাতৃশিক্ষায়তনপূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় (পূপাপ্রকাবি)
পেশাপ্রকৌশলী, শিক্ষক
প্রতিষ্ঠানকনস্ট্রাকশন অ‍্যানড বিল্ডিং (সি অ‍্যানড বি) ডিপার্টমেন্ট, দি ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড, টেকনিক্যাল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ
পরিচিতির কারণরাজনীতিবিদ, কবি, মুক্তিযোদ্ধা
রাজনৈতিক দলপূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি
দাম্পত্য সঙ্গীরওশন আরা মুক্তি (১৯৬৬-১৯৭০) (তালাক), জাহানারা হাকিম রাহেলা (১৯৬৯-১৯৭?) (তালাক), রওশন(), রাবেয়া খাতুন রুনু (), শায়লা আমিন ওরফে খালেদা ()
সঙ্গীজাহানারা হাকিম রাহেলা (ওনার স্বামী সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং তাঁদের ছেলে মেয়ে ছিল), মনজি খালেদা বেগম ওরফে সুফিয়া (দলীয় নাম) ওরফে রুবী ওরফে বুলু (দলীয় নাম)
সন্তানশিখা সিকদার (মেয়ে), শুভ্র সিকদার (ছেলে-মৃত), অরুণ (ছেলে)
পিতা-মাতাআবদুর রাজ্জাক সিকদার (বাবা)
আত্মীয়বাদশা আলম সিকদার (ভাই), শামীম শিকদার (বোন)

সিরাজুল হক সিকদার (২৭ অক্টোবর ১৯৪৪-২ জানুয়ারি ১৯৭৫) বাংলাদেশের একজন কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা ছিলেন।[] ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি তিনি সমমনা কয়েকজনকে নিয়ে পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন—যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন থেকে পূর্ববাংলাকে মুক্ত করে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করা, সমাজতন্ত্রসাম্যবাদ অভিমুখে যাত্রা করবার লক্ষ্যে বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা করা। সিরাজ সিকদার গ্রেফতার হন ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি এবং পরদিন ২ জানুয়ারি গভীর রাতে তাকে হত্যা করা হয়।[] অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, সিরাজের বোন শামীম সিকদার তার ভাইকে হত্যার জন্য শেখ মুজিবকে অভিযুক্ত করেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের ১৭ বছর পর ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ৪ জুন এই বিষয়ে আদালতে মামলা করা হয়। সেই মামলা এখনো বিচারাধীন।

প্রাথমিক জীবন

[সম্পাদনা]

সিরাজ সিকদারের পিতার নাম আবদুর রাজ্জাক সিকদার। ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজ সিকদার বরিশাল জিলা স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ থেকে তিনি আইএসসি পাস করেন। ১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি প্রকৌশলবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করেন পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্র অবস্থায় তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাথে জড়িত থেকে প্রত্যক্ষভাবে ছাত্ররাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন।[] ১৯৬৫ সালে অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা জেলা কমিটির কংগ্রেসে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের মেনন গ্রুপের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি পদে নির্বাচিত হন। ঐ বছরই তিনি সরকারের নির্মাণ (সি অ্যান্ড বি) বিভাগের কনিষ্ঠ প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন। কিন্তু মাত্র তিন মাসের মাথায় সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি টেকনাফের ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে সাইট প্রকৌশলী পদে যোগদান করেন।[]

শ্রেণীসংগ্রাম

[সম্পাদনা]

১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের ৮ জানুয়ারি সিরাজ সিকদার প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের মাধ্যমে উপস্থিত করেন পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের খসড়া থিসিস। এই থিসিসে তিনি পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের উপনিবেশ বলে অভিহিত করেন। প্রধান দ্বন্দ্ব নির্ধারণ করেন বর্তমান সামাজিক বিকাশের প্রক্রিয়ায় পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে পাকিস্তানি উপনিবেশবাদীদের জাতীয় দ্বন্দ্ব। থিসিসে জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লবের আহ্বান জানানো হয়। থিসিসে আরো বলা হয়, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ বর্তমান বিশ্ব প্রক্রিয়ার কেন্দ্র। ঘটনাবলি প্রমাণ করেছে যে, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ দুনিয়ার জনগণের প্রধান শত্রু। এ দ্বন্দ্ব বর্তমান এবং এটিই প্রধান দ্বন্দ্ব। পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মস্কোপন্থী)কে সংশোধনবাদী পার্টি বলে অভিহিত করে মন্তব্য করা হয়, এই পার্টি মার্কসবাদ-লেনিনবাদের সকল মূলতত্ত্বকে সংশোধন করে প্রকৃতপক্ষে শোষক শ্রেণি অর্থাৎ উপনিবেশবাদী, সামন্তবাদী, পুঁজিবাদী, সাম্রাজ্যবাদী ও সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল হয়ে পূর্ব বাংলার শ্রমিক কৃষকদের বিপথে চালিত করছে।[] পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের মূল প্রত্যয় ছিল জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটাতে হবে। সেই লক্ষ্যে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে একটি বিপ্লবী পরিষদ গঠিত হয়। তারপর ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে তিনি ঢাকা শহরে মাও সেতুং গবেষণাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন। মৌলবাদীদের চাপে পড়ে আইয়ুব সরকার এটি পরবর্তীকালে বন্ধ করে দেয়।[] মওদুদীর জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ তাদের পেছনে প্রথম থেকেই লেগে ছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজ সিকদারের বিপ্লবী পরিষদ বিভিন্ন জেলায় পাকিস্তানি প্রশাসন ও শ্রেণি শত্রুর বিরুদ্ধে গেরিলা অপারেশন চালায়। ঐ বছরের ৮ জানুয়ারি তারা ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ জেলাময়মনসিংহে ওড়ায় স্বাধীন পূর্ব বাংলার পতাকা। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২ মার্চ এই বিপ্লবী পরিষদ শেখ মুজিবুর রহমানআওয়ামী লীগের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লেখে, যা লিফলেট আকারে সারাদেশে প্রচার করা হয়। এর চার নাম্বার দফাটি ছিল পূর্ব বাংলার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধি সমন্বয়ে জাতীয় মুক্তি পরিষদ বা জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট গঠন করেন।[]

কাব্য

[সম্পাদনা]

সিরাজ সিকদারের একটি কবিতার লাইনঃ” আর কয়েকটা শত্রু খতম হলেই তো গ্রামগুলো আমাদের; জনগণ যেনো জল, গেরিলারা মাছের মতো সাঁতরায়…/” আজিজ মেহের বলেনঃআমি মনে করি, কমরেড সিরাজ সিকদারের একটি বিপ্লবী আকাঙ্খা ছিলো। কথাবার্তা, চলাফেরা– সবকিছুর মধ্যে ছিলো একটা আকর্ষণীয় ব্যাপার। তরুণ ছাত্রকর্মী, যারা বিপ্লবের জন্য ছিলো ব্যাকুল, তারা সহজেই আকৃষ্ট হয়েছিলো। তারা কয়েকটা গেরিলা গ্রুপ করে, কয়েকটি সরকারি অফিসে বোমাবাজী করে, দেয়াল লিখনে বেশ সাড়া জাগিয়েছিলো। বিশেষ করে সিরাজ সিকদারের থিসিস আকৃষ্ট করেছিলো ছাত্র-তরুণদের।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

মুক্তিযুদ্ধ

[সম্পাদনা]

১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল জয়ের মধ্য দিয়ে জাতীয় মুক্তির লড়াইয়ে পূর্ব বাংলার মধ্যবিত্ত ও বুর্জোয়াদের ক্ষুদ্র সংগঠন আওয়ামী লীগ মূল নেতৃত্বে চলে আসে। তবে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করতে থাকে। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার ডাক দেয় পাকিস্তানি জান্তা সরকার। তবে সিরাজ সিকদার ও তার সংগঠন পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন স্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান নেয় পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে। এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে সিরাজ সিকদার শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে একটি খোলা চিঠি লেখেন। ১ মার্চ ১৯৭১ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান যখন সংসদ অধিবেশন স্থগিত করার ঘোষণা দেন, তখন উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বাংলা। পরদিন ২ মার্চ পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন শেখ মুজিবকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করার আহ্বান জানায়। একই সময় সংগঠনটি সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি অস্থায়ী বিপ্লবী জোট সরকার গঠন এবং সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য জাতীয় মুক্তিযুদ্ধ পরিষদ গঠনের অনুরোধ জানায়। তবে মুজিব তখন ব্যস্ত আলাপ-আলোচনায় সমাধান খুঁজতে।

চিঠির সংক্ষিপ্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখানে ছাপা হবে ছোট অক্ষরে, আপনার ও আপনার পার্টির ছয় দফা সংগ্রামের রক্তাক্ত ইতিহাস স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে, ছয় দফার অর্থনৈতিক দাবিসমূহ বাস্তবায়ন সম্ভব সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যমে, পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন, মুক্ত ও স্বাধীন করে।

আপনাকে ও আপনার পার্টিকে পূর্ব বাংলার সাত কোটি জনসাধারণ ভোট প্রদান করেছে পূর্ব বাংলার উপরস্থ পাকিস্তানের অবাঙালি শাসকগোষ্ঠীর ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের অবসান করে স্বাধীন ও সার্বভৌম পূর্ব বাংলা কায়েম করার জন্য।

পূর্ব বাংলার জনগণের এ আশা-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য পূর্ব বাংলার শ্রমিক আন্দোলন আপনার প্রতি ও আওয়ামী লীগের প্রতি নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো পেশ করছে :

১. পূর্ব বাংলার নির্বাচিত জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে এবং সংখ্যাগুরু জাতীয় পরিষদের নেতা হিসেবে স্বাধীন, গণতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল পূর্ব বাংলার গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করুন। ২. পূর্ব বাংলার কৃষক-শ্রমিক, প্রকাশ্য ও গোপনে কার্যরত পূর্ব বাংলার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধি-সংবলিত স্বাধীন, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ, প্রগতিশীল পূর্ব বাংলার প্রজাতন্ত্রের অস্থায়ী সরকার কায়েম করুন। ৩. পূর্ব বাংলাব্যাপী এ সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের আহ্বান জানান। এ উদ্দেশ্যে পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তিবাহিনী গঠন এবং শহর ও গ্রামে জাতীয় শত্রু খতমের ও তাদের প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের আহ্বান জানান। ৪. পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনার জন্য শ্রমিক-কৃষক এবং প্রকাশ্য ও গোপনে কার্যরত পূর্ব বাংলার দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক পার্টি ও ব্যক্তিদের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে 'জাতীয় মুক্তি পরিষদ' বা 'জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট' গঠন করুন। ৫. প্রকাশ্য ও গোপন, শান্তিপূর্ণ ও সশস্ত্র, সংস্কারবাদী ও বিপ্লবী পদ্ধতিতে সংগ্রাম করার জন্য পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। (এরপর ৬ নম্বর পয়েন্টে শ্রমিক আন্দোলনের খোলা চিঠিতে ১৩টি করণীয় নির্ধারণ করে। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে জমি বণ্টন, শ্রমিকদের শ্রম শোষণ বন্ধ, ভাষাগত, ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘুদের সম-অধিকার দেওয়ার বিধানসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা হাজির করে)।

তবে শেখ মুজিব ও তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন শ্রমিক আন্দোলনের এই খোলা চিঠি আমলে আনেননি। হতে পারে নিরঙ্কুশ ভোটে জয় পাওয়ার পর আওয়ামী লীগ তখন একলা চলো নীতিতে অটুট ছিল। তবে মুজিবনগর সরকার ১৭ এপ্রিল শপথ নেওয়ার পর সেই সরকারের প্রতি আরেকটি খোলা চিঠি দেওয়া হয় শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষ থেকে। সেখানে যুদ্ধের ময়দানে করণীয় বিষয়ে তুলে ধরা হয়। তবে এবারও প্রবাসী সরকার শ্রমিক আন্দোলনের সেই চিঠিতে কর্ণপাত করেনি।

পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি গঠন

[সম্পাদনা]

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার পর সিরাজ সিকদার বরিশালের পেয়ারা বাগানে ৩০ এপ্রিল তারিখে গড়ে তোলেন পূর্ব বাংলার সশস্ত্র দেশপ্রেমিক বাহিনী। ৩ জুন পার্টির নতুন নাম দেয়া হয় পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি[] ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে সর্বহারা পার্টি দলের গেরিলাদের নির্দেশ দেয় পাকিস্তানি বাহিনী, ভারতীয় বাহিনী ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতে। কারণ সিরাজ সিকদার পাকিস্তানকে উপনিবেশবাদী, ভারতকে আধিপত্যবাদী এবং আওয়ামী লীগকে ভারতপন্থী আধিপত্যবাদী শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। বরিশাল থেকে শুরু করে দেশের কয়েকটি উপকূলীয় অঞ্চল–বিক্রমপুর, মানিকগঞ্জ জেলা, পাবনা, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকায় সর্বহারা পর্টির গেরিলারা পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে বীরত্বপূর্ণ লড়াই করে। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থক মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সর্বহারা পার্টির বহু সদস্য নিহত হয়েছিলো।[] ১৯৭১ সালের ১-৩ জুন যুদ্ধের ময়দানে পেয়ারা বাগানে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বে পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি তৈরি হয়। বরিশালের পেয়ারা বাগানকে বেছে নেওয়া হয় পার্টির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুর জন্য। এর আগে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে পার্টিগুলোর নাম সবই মোটামুটি কমিউনিস্ট পার্টি বা এর কাছাকাছি নাম রাখে; কিন্তু সিরাজ সিকদার প্রলেতারিয়েতের বাংলা সর্বহারার নামে নামকরণ করেন পার্টির। সর্বহারা পার্টি গঠনের ওই দিনে বরিশালের পেয়ারা বাগানে উপস্থিত ছিলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ফজলুল হক রানা। কালের কণ্ঠকে তিনি সেদিনের স্মৃতি হাতড়ে বলেন, 'বরিশালের পেয়ারা বাগানে সেদিন লাখ লাখ মানুষ উপস্থিত হয়েছিল। মনে হয়েছিল পেয়ারা বাগান যেন কোনো মুক্তাঞ্চল। এখানে নারী-পুরুষ যে এক নতুন পৃথিবীর জন্মের আগে সমবেত হয়েছে নতুন যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্য।'

সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন সর্বহারা পার্টি প্রথম দিকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীকে আশ্রয় দেয়। এ সময় সর্বহারা পার্টি কর্মসূচি হাতে নেয়, দেশপ্রেমিক মুক্তিবাহিনী গড়ে তোলার ব্যাপারে। এ অবস্থা ১৯৭১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সর্বহারা পার্টি ধরে রাখে। আগস্টের শুরুতে সর্বহারা পার্টির অন্যতম কেন্দ্রীয় সদস্য এবং বর্তমান বাংলাদেশের পতাকার নকশাকার সাইফুল্লাহ আজমীসহ পাঁচজন যোদ্ধাকে সাভারে পাঠানো হয় মুজিববাহিনীর সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্যে। মুজিববাহিনী তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে। বুর্জোয়া জাতীয়তাবাদী দলের বাহিনীর সঙ্গে শ্রমিক শ্রেণীর নেতৃত্বাধীন সর্বহারা পার্টির সব ঐক্য ভেস্তে যায়। তবে এরও আগে ভারতে খুব গোপনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (র-RAW)-এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠে মুজিববাহিনী। ১৯৭১ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে থেকে লড়াই-সংগ্রাম করেছে মূলত এ দেশের বিভিন্ন কমিউনিস্ট পার্টি ও গ্রুপ, যার মধ্যে সর্বহারা পার্টি অন্যতম।

বরিশালের বানারীপাড়া অঞ্চলে অবস্থান নেয় শ্রমিক আন্দোলন, ৩০ এপ্রিল গঠন করে জাতীয় মুক্তিবাহিনী, যা দখলমুক্ত করে পেয়ারা বাগানের খানিকটা। এ মুক্তিবাহিনী পরিচালনা করতে সিরাজ সিকদারকে প্রধান করে সর্বোচ্চ সামরিক পরিচালনামণ্ডলী গঠন করা হয়। বরিশালের পেয়ারা বাগান স্বাধীনতাসংগ্রাম চলার সময় প্রথম ঘাঁটি ও মুক্তাঞ্চল। এ বিষয়ে সর্বহারা পার্টির তৎকালীন বৃহত্তর বরিশাল (বরিশাল, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, ঝালকাঠি ও পিরোজপুর) অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক রইসউদ্দিন আরিফ (পরবর্তী সময়ে সিরাজ সিকদার নিহত হলে অস্থায়ী সর্বোচ্চ বিপ্লবী সংস্থার সভাপতি) কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বরিশালের পেয়ারা বাগান বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে প্রথম ঘাঁটি ও মুক্তাঞ্চল। এ অঞ্চলে পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক বড় অপারেশন চালাতে হয়েছিল। আবার সর্বহারা পার্টি পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখত। সর্বহারা পার্টি এ অঞ্চলে অজস্র সফল হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান বাহিনীর ওপর।'[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] এছাড়াও ১৯৭০ সালের মে এবং অক্টোবর মাসে পূর্ব বাংলা শ্রমিক আন্দোলনের গেরিলারা ঢাকাস্থ পাকিস্তান কাউন্সিল, বিএনআর ভবন, এবং মার্কিন তথ্য কেন্দ্রে যে বোমা হামলা পরিচালনা করেছিল, সেটি ছিলো পাকিস্তানি উপনিবেশবাদ ও মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম সশস্ত্র হামলা।[]

বরিশাল অঞ্চলে অসংখ্য সফল হামলা চালিয়ে সর্বহারা পার্টি পাকিস্তানি বাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। তবে স্বাধীনতার যত ইতিহাস লেখা হয়েছে, সেখানে বরিশালে সর্বহারা পার্টির অবদানকে খুব কৌশলে ঊহ্য রেখেছেন রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ইতিহাসবিদরা।

ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের বিরুদ্ধে সর্বহারা পার্টির নীতি

[সম্পাদনা]

১৯৭১-এ ভারতীয় সেনাবাহিনীর সরাসরি হস্তক্ষেপে দ্রুত বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। ভারতীয় বাহিনীর এই তৎপরতাকে সাদা চোখে দেখেনি সর্বহারা পার্টি। পার্টি মনে করে, পাকিস্তানের উপনিবেশ থেকে দেশ এবার ভারতীয় উপনিবেশের মধ্যে গিয়ে পড়েছে। এ সময় নতুন বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার প্রশ্নে সর্বহারা পার্টি বাংলাদেশের সরকারের প্রতি একটি খোলা চিঠি লেখে। ওই চিঠিতে বলা হয়, ভারতীয় সৈন্যদের অনতিবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া, যুদ্ধের সৈনিকদের দিয়ে নৌ, আকাশ ও স্থলবাহিনী তৈরি করা, স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করা, সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্বে জাতীয় বিপ্লবী সরকার গঠনসহ ২৭টি দাবি পেশ করা হয়। তবে মুজিব সরকার সর্বহারা পার্টির সেসব দাবির একটিতেও কর্ণপাত করেনি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

একাত্তর-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ

[সম্পাদনা]

একাত্তর এর পর সিরাজ সিকদার পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশকে ভারতের উপনিবেশ হিসেবে উল্লেখ করে "পূর্ব বাংলার বীর জনগণ, আমাদের সংগ্রাম এখনও শেষ হয় নি, পূর্ব বাংলার অসমাপ্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করার মহান সংগ্রাম চালিয়ে যান" নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলিল হাজির করেন। যেখানে আওয়ামী লীগকে জাতীয় বিশ্বাসঘাতক ও বেইমান হিসেবে উল্লেখ করে তাদের কে ছয় পাহাড়ের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৬ ডিসেম্বরকে কালো দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ এ এই দিনে দেশব্যাপী হরতাল পালন করা হলে মওলানা ভাসানী বিবৃতি দিয়ে তা সমর্থন করেন। ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে গঠিত 'পূর্ব বাংলার জাতীয় মুক্তিফ্রন্ট' কমিটির তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন।[] এরপর দেশব্যাপী গণভিত্তি সম্পন্ন পার্টি গড়ে তোলায় মনোনিবেশ করেন। দিনে দিনে সিরাজ সিকদার এক জনপ্রিয় নেতা হয়ে উঠতে থাকেন। ছাত্র-তরুন'রা দলে দলে তার সগঠনে যোগ দিয়ে লড়াই জারি রাখেন।

মৃত্যু

[সম্পাদনা]

১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা ঘোষিত হলে তিনি আত্মগোপন করেন।[] কী অবস্থায় সিরাজ সিকদার পুলিশের হাতে শেষপর্যন্ত আটক হন, এবং ঠিক কখন কোথায় কীভাবে তাকে নির্বিচার হত্যা করা হয়-সে সম্পর্কে অস্পষ্টতা রয়েছে। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ গ্রন্থে বলেছেন, সিরাজ সিকদার ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে ডিসেম্বরের শেষ দিকে চট্টগ্রামের কাছাকাছি এক এলাকা (টেকনাফ) থেকে পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার হন।[] অনেকের মতে ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের হালিশহরে সরকারী গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তাকে গ্রেপ্তার করেন। আবার অন্য তথ্যমতে তিনি চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন। গ্রেফতারকারী জানতেন না যে তিনি সিরাজ সিকদার। সেই দিনই তাকে বিমানে ঢাকায় আনা হয়। পরদিন শেরেবাংলা নগর থেকে সাভারে রক্ষীবাহিনীর ক্যাম্পে যাওয়ার পথে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে হত্যা করে।।[][] আবার জাকারিয়া চৌধুরীর[] মতে, সিরাজ সিকদারকে হাতকড়া লাগিয়ে চোখবাঁধা অবস্থায় ঢাকাস্থ রমনা রেসকোর্সের পুলিশ কন্ট্রোল রুমে নিয়ে আসা হয়। তারপর ২ জানুয়ারি ১৯৭৫ গভীর রাতে এক নির্জন রাস্তায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।[] অ্যান্থনি মাসকারেনহাস বলেন, সিরাজের ছোট বোন শামীম শিকদার তার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য শেখ মুজিবকে দায়ী করেছিলেন।[]

২ জানুয়ারি ১৯৭৫ গভীর রাতে পাওয়া পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়:

'পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি' নামে পরিচিত আত্মগোপনকারী চরমপন্থী দলের নেতা সিরাজুল হক সিকদার ওরফে সিরাজ সিকদারকে পুলিশ গত ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার করে। সেই দিনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হয়।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি স্বীকারোক্তিমূলক বিবৃতি দেন এবং তার দলীয় কর্মীদের কিছু গোপন আস্তানা এবং গোলাবারুদ দেখিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিশের সাথে যেতে সম্মত হন। তদানুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে একদল পুলিশ যখন তাকে পুলিশ ভ্যানে করে গোপন আস্তানার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন তিনি সাভারের কাছে পুলিশের ভ্যান থেকে লাফিয়ে পড়েন এবং পালিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। পুলিশ তার পলায়ন রোধের জন্য গুলিবর্ষণ করে। ফলে সিরাজ সিকদারের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে সাভার থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সিরাজ সিকদার তার গোপন দলে একদল ডাকাতের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন। এদের দ্বারাই তিনি গুপ্তহত্যা, থানা, বন বিভাগ দপ্তর, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ইত্যাদির ওপর হামলা, ব্যাংক লুট, হাটবাজার, লঞ্চ, ট্রেন ডাকাতি, রেললাইন উপরে ফেলে গুরুতর ট্রেন দুর্ঘটনা সংঘটন এবং জনসাধারণের কাছ থেকে জবরদস্তি টাকা আদায়-এ ধরণের উচ্ছৃঙ্খল অপরাদের মাধ্যমে শান্তি ও শৃঙ্খলাকে বিঘ্নিত করেছিলেন।

সিরাজ সিকদারের মৃত্যু নিয়ে পুলিশের প্রেসনোটে দেওয়া তথ্য অনেকেই বিশ্বাস করেনি। তাঁর ধরা পড়া ও মৃত্যু নিয়ে কয়েকটি ভাষ্য পাওয়া যায়।

ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় দুই কলামে শিরোনাম, 'গ্রেপ্তারের পর পলায়নকালে পুলিশের গুলিতে সিরাজ সিকদার নিহত'। দৈনিক বাংলার সংবাদ শিরোনাম ছিল 'সিরাজ সিকদার গ্রেপ্তার:পালাতে গিয়ে নিহত'।

সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ ১৯ মে ১৯৭৮ সংখ্যা সাপ্তাহিক বিচিত্রায় 'সিরাজ সিকদার হত্যার নেপথ্য কাহিনী' শিরোনামে তাঁর একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। সর্বহারা পার্টির একসময়ের অ্যাকটিভিস্ট মুনীর মোরশেদ ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত 'সিরাজ সিকদার ও পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টি ১৯৬৭-১৯৯২' বইয়ে এ বিষয়ে লিখেছেন। বাংলাদেশের প্রথম পররাষ্ট্র সচিব এস এ করিমের 'শেখ মুজিব:ট্রায়াম্ফ অ্যান্ড ট্রাজেডি' বইয়ে লিখেছেন। অবলুপ্ত জাতীয় রক্ষীবাহিনীর উপপরিচালক আনোয়ার উল আলম লিখেছেন 'রক্ষীবাহিনীর সত্য মিথ্যা' বইয়ে।  

১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর ১৭ বছর পর ১৯৯২ সালের ৪ জুন সিরাজ সিকদার গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান শেখ মহিউদ্দিন আহমদ ও মহাসচিব নাজমুল ইসলাম সাইদ ঢাকা মহানগর মুখ্য হাকিমের (সিএমএম) আদালতে মামলা দায়ের করেন। এই মামলার নিষ্পত্তি হয় নি।[১০]

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, সিরাজ শিকদার এবং পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির সশস্ত্র সংগ্রাম, হত্যার চেষ্টা, অপহরণ, এবং সন্ত্রাসবাদের মতো কর্মকাণ্ডের জন্য কঠোর শাস্তি প্রযোজ্য। "ফৌজদারি দণ্ডবিধি, ১৮৬০" এর অধীনে হত্যার জন্য মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড (ধারা ৩০২) এবং হত্যার চেষ্টার জন্য ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড (ধারা ৩০৭) নির্ধারিত হতে পারে। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম ও রাষ্ট্রদ্রোহের জন্য "সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯" এর অধীনে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। "অস্ত্র আইন, ১৮৭৮" অনুযায়ী বেআইনি অস্ত্র রাখার জন্য ৭ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। অপহরণের জন্য "ফৌজদারি দণ্ডবিধি, ১৮৬০" এর অধীনে ৭ বছর থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে (ধারা ৩৬৩)। [১১]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. মুয়ায্‌যম হুসায়ন খান (২০১২)। "শিকদার, সিরাজ"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  2. সেলিনা হোসেন ও নুরুল ইসলাম সম্পাদিত বাংলা একাডেমী চরিতাভিধান; ঢাকা, এপ্রিল, ২০০৩; পৃষ্ঠা-৪০১।
  3. জয়নাল আবেদীন, উপমহাদেশের জাতীয়তাবাদী ও বামধারার রাজনীতি প্রেক্ষিত বাংলাদেশ, বাংলাপ্রকাশ, ঢাকা; ফেব্রুয়ারি, ২০১৩, পৃষ্ঠা-২৪৫-২৪৭।
  4. বসু, অঞ্জলি (নভেম্বর ২০১৩)। বসু, অঞ্জলি; সেনগুপ্ত, সুবোধচন্দ্র, সম্পাদকগণ। সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান (পঞ্চম সংস্করণ, দ্বিতীয় মুদ্রণ সংস্করণ)। কলকাতা: সাহিত্য সংসদ। পৃষ্ঠা ৭৮০। আইএসবিএন 978-8179551356 
  5. মাওইজম ইন বাংলাদেশ : দ্য কেস অব পূর্ববাংলা সর্বহারা পার্টি, মো. নূরুল আমিন
  6. মাস্কারেনহাস, এন্থনি; শাহজাহান, মোহাম্মদ (১৯৮৮)। বাংলাদেশঃ রক্তের ঋণ। হাক্কানি পাবলিশার্স। পৃষ্ঠা ৫২। আইএসবিএন 984-433-066-1 
  7. "NetNewsLedger - Thunder Bay News - January 2 - This Day in History"NetNewsLedger - Thunder Bay News। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৪-১২ 
  8. জাকারিয়া চৌধুরী হলেন সিরাজ সিকদারের ছোটবোন ভাস্কর শামীম সিকদারের স্বামী
  9. বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ, অ্যান্থনী মাসকেরেনহাস, অনুবাদ- মোহাম্মাদ শাজাহান, হাক্কানী পাবলিশার্স, চতুর্থ মূদ্রণ-জুলাই ২০০৬।
  10. "সিরাজ সিকদার : বাংলাদেশের চে গুয়েভারা"। ১০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ জানুয়ারি ২০১২ 
  11. বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদীয় বিষয়ক। "বাংলাদেশের আইন"মিনিস্ট্রি অফ ল, বাংলাদেশ 

১১. মহিউদ্দিন আহমদ, লাল সন্ত্রাস: সিরাজ সিকদার ও সর্বহারা রাজনীতি, প্রথমা।

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
{{bottomLinkPreText}} {{bottomLinkText}}
সিরাজ সিকদার
Listen to this article

This browser is not supported by Wikiwand :(
Wikiwand requires a browser with modern capabilities in order to provide you with the best reading experience.
Please download and use one of the following browsers:

This article was just edited, click to reload
This article has been deleted on Wikipedia (Why?)

Back to homepage

Please click Add in the dialog above
Please click Allow in the top-left corner,
then click Install Now in the dialog
Please click Open in the download dialog,
then click Install
Please click the "Downloads" icon in the Safari toolbar, open the first download in the list,
then click Install
{{::$root.activation.text}}

Install Wikiwand

Install on Chrome Install on Firefox
Don't forget to rate us

Tell your friends about Wikiwand!

Gmail Facebook Twitter Link

Enjoying Wikiwand?

Tell your friends and spread the love:
Share on Gmail Share on Facebook Share on Twitter Share on Buffer

Our magic isn't perfect

You can help our automatic cover photo selection by reporting an unsuitable photo.

This photo is visually disturbing This photo is not a good choice

Thank you for helping!


Your input will affect cover photo selection, along with input from other users.

X

Get ready for Wikiwand 2.0 🎉! the new version arrives on September 1st! Don't want to wait?