For faster navigation, this Iframe is preloading the Wikiwand page for মহারানা প্রতাপ.

মহারানা প্রতাপ

মহারাণা প্রতাপ সিং
মেওয়ারের রাজা ও রাজপুতানার বীর পুত্র
রাজত্ব১৫৭২–১৫৯৭
রাজ্যাভিষেকমার্চ ১, ১৫৭২
পূর্বসূরিউদয় সিং
উত্তরসূরিপ্রথম অমর সিং[]
জন্ম(১৫৪০-০৫-০৯)৯ মে ১৫৪০
কুম্বলগড় কেল্লা, মেবার (বর্তমান রাজস্থান, ভারত)
মৃত্যু১৯ জানুয়ারি ১৫৯৭(1597-01-19) (বয়স ৫৬)
চাবিন্দা, মেবার (বর্তমান রাজস্থান, ভারত)
দাম্পত্য সঙ্গী১১ (মহারাণী আজাবদে সহ)
বংশধরঅমর সিং
ভগবান দাস
( ও ২০ পুত্র)
প্রাসাদশিশোদিয়া সূর্য বংশ
পিতাউদয় সিং
মাতামহারাণী জৈবন্ত বাই[]
ধর্মহিন্দুধর্ম

মহারাণা প্রতাপ বা প্রতাপ সিং (মে ৯, ১৫৪০ – জানুয়ারি ১৯, ১৫৯৭) মেবারের শিশোদিয়া রাজবংশের একজন হিন্দু রাজপুত রাজা। মেবার উত্তর পশ্চিম ভারতের একটি প্রদেশ, বর্তমানে এই প্রদেশ রাজস্থান রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। তিনি ছিলেন রাজপুতদের বীরত্ব ও দৃঢ় সংকল্পের প্রতীক। বহু বছর ধরে তিনি মুঘল সম্রাট আকবরের সঙ্গে লড়াই করেন। মেবারের এই বীর পুত্র ১৫৪০ সালের ৯ মে কুম্বলগড়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মহারানা উদয় সিং দ্বিতীয় ও মাতা জয়বন্তা বাঈ। মহারানা প্রতাপ তার গুরু আচার্য রাঘবেন্দ্রর কাছে শিক্ষালাভ করেন। মহারানা প্রতাপের পিতামহ মহারানা সংগ্রাম সিং মুঘল সম্রাট বাবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বীরগতি প্রাপ্ত হন। বিখ্যাত শিশোদিয়া রাজপুত বংশে জন্ম হলেও প্রতাপ ছোটো খেকেই বন্ধুবৎসল ও নিরহংকার ছিলেন। তিনি বন্ধুদের নিয়ে মেবারের আরাবল্লী পর্বতের জঙ্গলে খেলতেন, ঘুরে বেড়াতেন, সেই সময় জঙ্গলের ভীল জনগোষ্ঠীর লোকেদের সাথে এবং মেবারের প্রজাদের সাথে তার সুসম্পর্ক তৈরি হয়। এছাড়াও ছোটো থেকে রামায়ণ এবং মহাভারত শুনতে শুনতে তার মধ্যে বীরত্ব ও দেশপ্রেমের সঞ্চার ঘটেছিল। তার ভাইদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন শক্তি সিং, বিক্রমাদিত্য সিং, ও জগমাল সিং। মহারানা প্রতাপ বিজোলিয়ার আজাবদে পানওয়ারকে বিবাহ করেন, তার ১৭ জন পুত্র এবং ৫ জন কন্যার মধ্যে সর্বোজেষ্ঠ্য ছিলেন মহারানা অমর সিং।

রক্তাক্ত চিত্তোড় অবরোধ- ভারতের বিভিন্ন রাজ্য বিজয় করতে করতে মুঘল সম্রাট আকবরের চোখ যায় রাজপুতানার দিকে, চতুর আকবর জানতেন যে যদি মুঘলরা কোনোরকম ভাবে চিত্তোড় জয় করতে পারে তাহলে রাজপুতানার বাকি রাজ্যগুলি বিনা যুদ্ধেই আকবরের কাছে আত্মসমর্পণ করবে এবং মুঘল আধিপত্য স্বীকার করে নেবে। ১৫৬৭ সালে আকবর ২০০০০ সৈন্য ও ৪০০ কামান নিয়ে চিত্তোড় দুর্গের কিছু দূরে শিবির স্থাপন করেন। কিন্তু আকবরের সৈন্য সংখ্যার তুলনায় মেবারের সৈন্য সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় তৎকালীন মেবারের শাসক প্রতাপের পিতা মহারানা উদয় সিং যুদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত নেন, অন্যদিকে আকবর তার সৈন্য সংখ্যা ক্রমশ বাড়াতে থাকেন এবং টানা একবছর অবরোধের পর চিত্তোড় দুর্গকে সম্পূর্ণভাবে ঘিরে ফেলেন। এরকম পরিস্থিতিতে মেবারের সেনাপতি ও সামন্তরা রানা উদয় সিংকে সপরিবারে চিত্তোড় ছেড়ে অন্য কোনো সুরক্ষিত স্থানে চলে যেতে অনুরোধ করেন কারন সেই জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মেবারের মহারানা এবং যুবরাজ প্রতাপের জীবিত থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শেষপর্যন্ত মহারানা উদয় সিং সপরিবারে গোগুন্ডার দুর্গে আশ্রয় নেন। ১৫৬৮ সালের শেষের দিকে সেনাপতি জয়মল রাঠোর, পত্তা চুন্ডাওয়াত, ঈশ্বর দাস চৌহান, কল‍্যাণ সিংহ রাঠোর ও রাওয়াত সাঁইদাস চুন্ডাওয়াতের নেতৃত্বে মেবার সৈন্যের সাথে মুঘল সেনার ভয়ানক রক্তক্ষয়ী নির্নায়ক যুদ্ধ সংঘটিত হয় যা আজও "চিত্তোড়গড় সাকা" নামে পরিচিত। এই যুদ্ধে প্রত্যেক রাজপুত সৈনিক নিজেদের রক্তের অন্তিম বিন্দু পর্যন্ত যুদ্ধ করে বীরগতি প্রাপ্ত হন। দূর্গের ভিতরে থাকা মহিলারা জহর (জহর এমন একটি গৌরবজনক প্রথা যেখানে মহিলারা শত্রুসৈন্যের হাত থেকে নিজেদের সন্মান রক্ষার জন্য জলন্ত অগ্নিকুন্ডে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণত্যাগ করতেন) করেন। মুঘল সম্রাট আকবরও রাজপুতদের বীরত্বে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে তিনি আগ্রায় ফিরে গিয়ে সেনাপতি জয়মাল ও পত্তার মুর্তি নির্মাণ করান। আকবর চিত্তোরের ৪০০০০ সাধারন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেন,তাদের একমাত্র দোষ ছিল যে তারা মুঘল অবরোধের সময় রাজপুত সেনাদের রসদ দিয়ে সাহায্য করেছিল।এই সাকা এবং জহর প্রতাপের চরিত্রকে আরও দৃঢসঙ্কল্পযুক্ত,স্বাভিমানী করে তোলে, এবং মহারানা প্রতাপ আকবরের প্রধান শত্রুতে পরিণত হন। মহারানা প্রতাপ প্রতিজ্ঞা করেন যে যতদিন না তিনি চিত্তোড় উদ্ধার করছেন ততদিন তিনি সোনা-রূপার বদলে কাঠের পাত্রে ভোজন করবেন এবং কুশের শয্যায় শয়ন করবেন।

উদয়পুর নির্মাণ- চিত্তোড়গড় যুদ্ধের পর মহারানা উদয় সিং উদয়পুর নামে এক নগর নির্মাণ করেন যেখানে তিনি মেবারের রাজধানী স্থাপন করেন।

রাজ্যাভিষেক- ১৫৭২ সালে মহারানা উদয় সিং মারা যান। তিনি চেয়েছিলেন যে তার প্রিয় স্ত্রী ধীর বাঈ এর পুত্র জগমাল সিংহাসনে বসুক। প্রতাপও সিংহাসন নিয়ে ভাই এর সাথে বিবাদে জড়াতে অস্বীকৃত হন। কিন্তু মেবারের সামন্ত, সেনাপতি এবং প্রজাদের একান্ত অনুরোধে মহারানা প্রতাপ সিংহাসনে বসেন। জগমাল আজমেরে গিয়ে আকবরের সৈন্যের সাথে মিলিত হন এবং জাহাজপুরের জাগীর পান। মহারানা প্রতাপ রাজপুতানার রাজাদের আকবরের বিরুদ্ধে একত্রিত করার চেষ্টা করতে থাকেন।

হলদিঘাটির যুদ্ধ

[সম্পাদনা]

মহারানা প্রতাপের রাজ্যাভিষেকের কিছু পরেই ১৮ জুন ১৫৭৬ সালে মেবার ও মুঘলদের মধ্যে এই ভয়ংকর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুঘল সম্রাট আকবর হলদিঘাটির নিয়ন্ত্রণ চেয়েছিলেন সুদূর গুজরাত পর্যন্ত বাণিজ্য পথ সুগম করতে। মেবারের মহারানা তার মাতৃভূমি ছেড়ে দিতে রাজি না হওয়ায় যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। চিত্তোড়গড়ের নরসংহারের কথা মাথায় রেখে রানা প্রতাপ তার সমস্ত প্রজাদের রাজ্য থেকে সরিয়ে বনে স্থানান্তরিত করেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে আকবর একাধিক বার দূত প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন রানাকে মুঘল আধিপত্য স্বীকার করানোর জন্য, আকবর তার অর্ধেক সাম্রাজ্য দেওয়ার প্রস্তাব রাখেন কিন্তু মহারানা তার আধিপত্য স্বীকার করতে রাজি হন নি এই কারণে প্রবল শত্রু হওয়া সত্ত্বেও আকবর মহারানা প্রতাপকে সন্মান করতেন। মহারানা প্রতাপ আরাবল্লি পর্বতের জঙ্গলে থেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন এবং যুদ্ধে গেরিলা কৌশল অবলম্বন করার সিদ্ধান্ত নেন। জঙ্গলের ভীল সর্দার রানা পুঞ্জা ও তার ভীল সৈন্য মহারানা প্রতাপকে সহায়তা করে। আফগান সর্দার হাকিম খান সুরী এই যুদ্ধে মহারানার পক্ষ নেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মহারানা প্রতাপের সেনাপতিরা ছিলেন মানসিং ঝালা, ভামাশাহ, রামশাহ তোমর, শালিবাহন সিং তোমর, ভবানী সিং তোমর, প্রতাপ সিং তোমর, হাডা দোদা সান্ডা, ভীমসিং ডোডিয়া, হাকিম খান সুরী, রামদাস রাঠোর, তারাচাঁদ, যুবরাজ অমর সিং, রাওয়াত কৃষনদাস চুন্দাওয়াত, রানা পুঞ্জা, চন্দ্রসেন রাঠোর প্রমুখ। মুঘল সেনার নেতৃত্বে ছিলেন আমেরের রাজা মানসিং, মুলতান খান, কোয়াজি খান, বেহলোল খান, সেলিম। এই যুদ্ধে মহারানার সৈন্য অভূতপূর্ব পরাক্রম প্রদর্শন করে। মহারানা প্রতাপের ২২০০০ সৈন্যের সাথে ৮০০০০ মুঘল সেনার ঘোর যুদ্ধ হয়। মহারানা প্রতাপ তার তলোয়ার দিয়ে মুঘল সেনাপতি বেহলোল খানের মাথায় এত জোরে কোপ মারেন যে বেহলোল খান ঘোড়া সহিত আপাদমস্তক দুটুকরো হয়ে যান। মহারানা প্রতাপ তার ঘোড়া চেতকে চড়ে হাতির উপরে থাকা রাজা মানসিং কে ভল্লের আঘাতে অচৈতন্য করে দেন, কিন্তু শেষপর্যন্ত সংখায় অধিক, বন্দুক ও কামানে সজ্জিত মুঘলদের কাছে পরাজিত হন। মেবারের সেনাপতি ঝালা মানসিং এর অনুরোধে মহারানা প্রতাপ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে যান, এরফলে মুঘলরা তাকে বন্দি করতে অসমর্থ হয়। শ্বেতছত্র ঝালা মানসিংহের মাথায় স্থানান্তরিত হওয়ায় মুঘলরা তাকে মহারানা প্রতাপ ভেবে হত্যা করে। ঝালা মানসিংহের এই বলিদান ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছে। মহারানা প্রতাপের প্রভুভক্ত ঘোড়া চেতক ৩০ ফুট চওড়া একটি গিরিখাত একলাফে পার করে মহারানা প্রতাপকে একটি সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে এসে প্রানত্যাগ করে, পরে সেই স্থানে চেতক স্মারক নির্মিত হয়। মহারানা প্রতাপের হাতি রামপ্রসাদকে মুঘলরা বন্দি করে ও তাকে আকবরের কাছে নিয়ে যায়, কিন্তু রামপ্রসাদ আমৃত্যু অন্নজল ত্যাগ করে দেয় ও মারা যায়, আকবর বলেছিলেন "মহারানা প্রতাপ তো দূর মহারানা প্রতাপের হাতি আমার সামনে মাথা নত করল না"। এই যুদ্ধে ১২০০০ মেবারের সৈন্য ও ৪০০০০ মুঘল সেনা মারা যায়, যুদ্ধক্ষেত্রে এত রক্তপাত হয় যে সেই জায়গা আজও রক্ততলাই নামে পরিচিত।


যুদ্ধ পরবর্তী ঘটনা- হলদিঘাটের যুদ্ধে পরাজয় মহারানা প্রতাপের সাহস ও স্বাভিমানকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। মহারানা প্রতাপ আরাবল্লীর জঙ্গলে পুনরায় সৈন্য গঠন করতে থাকেন। মন্ত্রী ভামাশাহ তার পারিবারিক সম্পত্তি ১২০০০০ স্বর্ণমুদ্রা দান করেন যা ১২০০০ সৈন্যের ১২ বছরের খরচ।


দিওয়ারের যুদ্ধ- মহারানা প্রতাপ নতুন সেনা গঠন করে আবার রণসাগরে ঝাঁপ দিলেন,

এবং গ্রামের পর গ্রাম, দুর্গের পর দুর্গ, নগরের পর নগর উদ্ধার করতে লাগলেন। তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দেন অনুজ শক্তি সিং, পুত্র তথা যুবরাজ অমর সিং, ভীল সর্দার রানা পুন্জা ও রাওয়াত কৃষণদাস চুন্দাওয়াত। অবশেষে ১৫৮২ সালে দিওয়ারের যুদ্ধে মেবারের ১৫ টি মুঘল চৌকির ২১০০০ মুঘল সেনা মহারানার কাছে আত্মসমর্পণ করে। মেবারে পুনরায় মহারানার শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৫৮৪ সালে আকবর গুজরাতের জগন্নাথ কচ্ছ ও রহিম খান-ই-খানম কে যুদ্ধের জন্য পাঠান কিন্তু তারা মহারানার কাছে চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়। চিত্তোর, আজমের, মণ্ডলগড় বাদে সমস্ত মেবার মহারানা প্রতাপ নিজ শাসনাধীন করেছিলেন।


মৃত্যু- মৃত্যুর আগে পর্যন্ত মহারানা প্রতাপ যুদ্ধবিধ্বস্ত মেবারের সবরকম উন্নতিসাধন করেছিলেন। ১৫৯৭ সালের ১৯ জানুয়ারি ৫৬ বছর বয়সে মহারানা প্রতাপ শিকার দুর্ঘটনায় মারা যান। কিন্তু দেশপ্রেম, বীরত্ব, সাহস ও দৃঢসঙ্কল্পের প্রতীকরূপে মহারানা প্রতাপ আমাদের হৃদয়ে সবসময় জীবিত থাকবেন।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Rana, Bhawan Singh (২০০৪)। Maharana Pratap। Diamond Pocket Books। পৃষ্ঠা 28, 105। আইএসবিএন 9788128808258 
  2. Sarkar, Jadunath (১৯৯৪)। A History of Jaipur : c. 1503 - 1938। Orient Longman। পৃষ্ঠা 83। আইএসবিএন 9788125003335 
{{bottomLinkPreText}} {{bottomLinkText}}
মহারানা প্রতাপ
Listen to this article

This browser is not supported by Wikiwand :(
Wikiwand requires a browser with modern capabilities in order to provide you with the best reading experience.
Please download and use one of the following browsers:

This article was just edited, click to reload
This article has been deleted on Wikipedia (Why?)

Back to homepage

Please click Add in the dialog above
Please click Allow in the top-left corner,
then click Install Now in the dialog
Please click Open in the download dialog,
then click Install
Please click the "Downloads" icon in the Safari toolbar, open the first download in the list,
then click Install
{{::$root.activation.text}}

Install Wikiwand

Install on Chrome Install on Firefox
Don't forget to rate us

Tell your friends about Wikiwand!

Gmail Facebook Twitter Link

Enjoying Wikiwand?

Tell your friends and spread the love:
Share on Gmail Share on Facebook Share on Twitter Share on Buffer

Our magic isn't perfect

You can help our automatic cover photo selection by reporting an unsuitable photo.

This photo is visually disturbing This photo is not a good choice

Thank you for helping!


Your input will affect cover photo selection, along with input from other users.

X

Get ready for Wikiwand 2.0 🎉! the new version arrives on September 1st! Don't want to wait?