For faster navigation, this Iframe is preloading the Wikiwand page for দশমহাবিদ্যা.

দশমহাবিদ্যা

দশমহাবিদ্যা - (উপরে বামদিক থেকে) কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, (নিচে বামদিক থেকে) ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গী, কমলা।
কালী
ললিতা-ত্রিপুরসুন্দরী
ছিন্নমস্তা
বগলামুখী

মহাবিদ্যা বা দশমহাবিদ্যা সনাতন ধর্মে দেবী অর্থাৎ দিব্য জননী নিরাকার আদ্যাশক্তি পার্বতীর সাকার দশটি বিশেষ রূপের সমষ্টিগত নাম। এই দশটি রূপ হল দেবী পার্বতীর দশটি স্বরূপ। দেবীত্বের এই ক্রমবিকাশে একদিকে যেমন রয়েছেন ভয়ংকরী দেবীমূর্তি, তেমনই অন্য প্রান্তে রয়েছেন অপরূপা সুন্দরী দেবীপ্রতিমা।[]

মুণ্ডমালা তন্ত্র অনুসারে দশমহাবিদ্যা হলেন কালী, তারা, ষোড়শী, ভুবনেশ্বরী, ভৈরবী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলা, মাতঙ্গীকমলা। তবে মহাবিদ্যার সংখ্যা নিয়ে মতান্তর রয়েছে। এমনকি একটি মতে মহাবিদ্যার সংখ্যা ২৭ বলা হয়েছে। দুর্গা, কামাখ্যাঅন্নপূর্ণাও মহাবিদ্যা। মালিনী বিজয় গ্রন্থ মতে, মহাবিদ্যা হলেন কালী, নীলা, মহাদুর্গা, ত্বরিতা, ছিন্নমস্তিকা, বাগ্বাদিনী, অন্নপূর্ণা, প্রত্যঙ্গিরা, কামাখ্যাবাসিনী, বালা, হিংলাজ, ডাম্রী, মাতঙ্গীশৈলবাসিনী[]

১. কালী,

২. তারা,

৩. ষোড়শী (ললিতা ত্রিপুরাসুন্দরী),

৪. ভুবনেশ্বরী,

৫. ভৈরবী,

৬. ছিন্নমস্তা,

৭. ধূমাবতী,

৮. বগলামুখী,

৯. মাতঙ্গী,

১০. কমলা

শাক্তধর্মের ইতিহাসে মহাবিদ্যা ধারণার বিকাশ একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এই ধারণা শাক্তধর্মে ভক্তিবাদের সূচনা ঘটায়; চতুর্দশ শতাব্দীতে যা লাভ করে চূড়ান্ত সমৃদ্ধি। উত্তর-পৌরাণিক যুগে, খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী নাগাদ হিন্দু দেবমণ্ডলীতে পুরুষদেবতার প্রাধান্যের প্রতিক্রিয়ারূপে এক নতুন ধর্মান্দোলনের সূচনা ঘটেছিল। এই নতুন ধর্মমতে পরম সত্ত্বাকে নারীরূপে কল্পনা করা হয়। এই মতকে ভিত্তি করে একাধিক ধর্মগ্রন্থ রচিত হয়। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল দেবীভাগবত পুরাণদেবীভাগবত-এর সপ্তম স্কন্দের শেষ নয়টি অধ্যায় দেবী গীতা নামে পরিচিত। এটি শাক্তধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ।[]

ব্যুৎপত্তি

[সম্পাদনা]

মহাবিদ্যা কথাটি মূলত সংস্কৃত শব্দ। সংস্কৃত মহা (অর্থাৎ মহৎ) ও বিদ্যা (অর্থাৎ প্রকাশ, রূপ, জ্ঞান বা বুদ্ধি) শব্দদুটি থেকে মহাবিদ্যা কথাটির উৎপত্তি।[] এর সঙ্গে কখনও কখনও সংখ্যাবাচক দশ কথাটি যুক্ত হয়ে থাকে।

শাক্তরা বিশ্বাস করে, "একই সত্য দশটি ভিন্ন রূপে প্রকাশিত; দিব্য জননী দশ দেবীসত্তা রূপে দৃষ্ট ও পূজিত হয়ে থাকেন ।” এই দশটি রূপই হল "দশমহাবিদ্যা"।[] মহাবিদ্যাগণ প্রকৃতিগতভাবে তান্ত্রিক। তাঁদের সাধারণ নামগুলি হল:[]

  • কালী/মহাকালী : সর্বসংহারকারিণী, জন্ম ও শক্তির দেবী। কালীকুল সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবী।শুম্ভ আর নিশুম্ভের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দেবতাদের মিলিত প্রার্থনায় দেবী দুর্গার ভ্রুকুটিকুটিল তৃতীয় নয়ন থেকে আবির্ভূতা হয়েছেন দেবী কালী। দেবী মহাকালী ঘোর কৃষ্ণবর্ণা বা গায়ের রং কালো। তিনি ত্রিনয়না যা ভূত, ভবিষ্যৎ এবং বর্তমান কাল নির্দেশ করে, তাঁর উজ্জ্বল দাঁত, করাল বদন, সেই মুখ থেকে রক্তরাঙা জিহ্বাটি বহির্মুখী। তিনি এলোকেশী। তিনি মূলতঃ দিগ্বসনা, কখনোও বা কৃষ্ণবস্ত্র ও বাঘছাল পরিহিতা, তাঁর গলায় নরমুণ্ডের মালা ও রক্তজবার মালা আছে, তিনি কোমরে কর্তিত হাতের মালা বা করকাঞ্চী পরিধান করেন। তিনি চতুর্ভুজা, ডানদিকের দুটি হাতে বর ও অভয় মুদ্রা এবং আর দুটি বাম হাতের একটিতে খড়্গ এবং অপরটিতে নৃমুণ্ড ধারণ করেন। স্বতন্ত্র তন্ত্রের ধ্যান বর্ণনা অনুযায়ী তিনি নাগযজ্ঞোপবীত ধারিণী।
  • মহাতারা: পথপ্রদর্শিকা ও রক্ষিকা (তারিণী) দেবী যিনি সবাইকে রক্ষা করেন। বিশ্বের উৎস হিরণ্যগর্ভের শক্তি এবং মহাশূন্যের প্রতীক। নীল গাত্রবর্ণের কারণে তাঁকে বলা হয় মহানীলসরস্বতী। পুরাণানুসারে, সমুদ্রমন্থনের সময় শিব হলাহল পান করে অসুস্থ ও অসুর হলে দেবী তারা তাকে অসুররূপে পুত্রস্নেহে নিজ স্তন্য পান করিয়ে সুস্থ করেন। তিনি এলোকেশী ও পিঙ্গল জটা ধারিণী, মস্তকে অর্ধচন্দ্র ও পঞ্চমুদ্রাখচিত মুকুট পরিধান করেন। তিনি ত্রিনয়না, গলায় একটি সর্প যজ্ঞোপবীতরূপে রয়েছে, তিনি ব্যাঘ্রচর্ম এবং অস্থি দিয়ে তৈরি মালা পরিধান করেন। তাঁর চার হাতে পদ্ম, খড়গ, অসুরমুণ্ড ও কাস্তে রয়েছে। তাঁর বাম চরণ শবরূপী শিবের হৃদয়ে স্থাপিত।
  • ললিতাম্বা ত্রিপুরাসুন্দরী বা (ষোড়শী) পূর্ণতা ও পূর্ণাঙ্গতার স্বরূপ। শ্রীকুল সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ দেবী। তান্ত্রিক মহাগৌরী বা পার্বতী নামে পরিচিতা।‘ ত্রিপুর’ অর্থাৎ ইড়া, পিঙ্গলা ও সুষুম্নাতে অবস্থিত এই ষোড়শী। এই ত্রিপুর আসলে মন, চিত্ত ও বুদ্ধি। দেবীর গাত্রবর্ণ গলিত স্বর্ণের মতো।
  • ভুবনেশ্বরী: বিশ্বজননী। পার্থিব জগতের শক্তিসমূহের প্রতীক। পুরাণের কাহিনী অনুযায়ী উন্মত্ত হয়ে দেবী যখন ষোড়শী রূপ ধারণ করেন, তখন শিবের বুকে নিজের ভয়াল ছায়া দেখে খুবই ভীত হয়ে পড়েন। তারপর সেই ছায়া দেখে নিজের বলে যখন চিনতে পারেন, তখন কিছুটা সুস্থির হন দেবী। এই অবস্থার রূপই হলেন ভুবনেশ্বরী।
  • ভৈরবী: ভয়ংকরিণী দেবী। সেই কামনা ও প্রলোভনের স্বরূপ যা মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যায়। অস্ত্রহীনা এই দেবী বিদ্যা ও ধন-সম্পদের দেবী। চৌষট্টি যোগিনীর মধ্যে এক অন্যতম যোগিনী এই ভৈরবী বা ভৈরবকন্যা।
  • ছিন্নমস্তা: উলঙ্গিণী, স্বন্দদাত্রী ও রক্তদাত্রী দেবীমূর্তি। তিনি স্বহস্তে নিজ মস্তক ছিন্ন করে নিজ রক্ত নিজেই পান করেন। চক্রপথে আত্মধ্বংস ও আত্মপুনরুজ্জীবনের মাধ্যমে সৃষ্ট জগতের অবিরাম বিদ্যমানতার শক্তির প্রতীক।রতি এবং কামদেবের বুকের উপর দণ্ডায়মান দেবী ছিন্নমস্তা সম্পূর্ণ নগ্ন এবং তার গলায় ঝুলছে নরমুণ্ডের মালা। ভয়ঙ্কর ভয়াল রূপের এই ছিন্নমস্তা ধ্বংসের প্রতিরূপ।
  • ধূমাবতী: বিধবা দেবীমূর্তি। অগ্নির দ্বারা জগৎ ধ্বংসের পর ভষ্মরাশির মধ্য থেকে যে ধূম নির্গত হয়, তার স্বরূপ। তিনি কখনও কখনও মহা অলক্ষ্মী বা জ্যেষ্ঠাদেবী নামেও অভিহিতা হন। ‘ধূম’ কথার অর্থ হল ধোঁয়া। যিনি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন তাঁকেই ধূমাবতী বলা হয়। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী প্রচণ্ড ক্ষুধায় ঘরে খাদ্যদ্রব্য বা অন্ন কিছুই না থাকায় পার্বতী শিবকে গ্রাস করে ফেলেন আর সেই সময়েই তার দেহ থেকে প্রচুর ধোঁয়া নির্গত হতে থাকে। সেই ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন দেবী ম্লান ও বিবর্ণ হয়ে যান। শিবকে গ্রাস করার পরে তিনি বৈধব্যে উপনীত হন। আর দেবীর এই বৈধব্য বেশই ধূমাবতী। এই দেবীর দুই হাতের এক হাতে থাকে কুলো আর অন্য হাতে থাকে ধর।
  • বগলামুখী: শত্রুবিনাশিনী দেবী। ঈর্ষা, ঘৃণা ও নিষ্ঠুরতার মতো মানবচরিত্রের অন্ধকার দিক নিয়ন্ত্রণ করেন। তাকে সারস-মুণ্ড রূপেও কল্পনা করা হয়। দশমহাবিদ্যার অষ্টম দেবী বগলা রুরুরাসুর নামক দৈত্যের পুত্র দুর্গমাসুরকে যুদ্ধে পরাজিত করে দেবতাদের রক্ষা করেন। শবদেহের শিশ্ন অঙ্গই দেবীর বাহন।
  • মাতঙ্গী: কর্তৃত্ব শক্তির দেবী। জাতিহীনা দেবী (কালীকুল সম্প্রদায়ে), ললিতার প্রধানমন্ত্রী (শ্রীকুল সম্প্রদায়ে); তান্ত্রিক মহাসরস্বতী।স্কন্দপুরাণে বলা হয়েছে, মতঙ্গ নামের এক মুনির আশ্রমে দেবতারা যখন সাধনা করছিলেন, তখন দেবী মাতঙ্গী আবির্ভূতা হয়ে শুম্ভাসুর ও নিশুম্ভাসুরকে বধ করেন। এই দেবীর মাথায় চাঁদ শোভা পায়।
  • কমলাকামিনী: বরাভয় প্রদায়িনী শুদ্ধ চৈতন্যের দেবী। ভাগ্যদেবী মহালক্ষ্মীর অন্যরূপ। তান্ত্রিক মহালক্ষ্মী নামেও অভিহিতা।বরাভয়দাত্রী দেবী কমলা আসলে লক্ষ্মীরই অপর রূপ। দেবী কমলাকে অনেক সময় কমলেকামিনীও বলা হয়ে থাকে নানা পুরাণে।

মহাভাগবত পুরাণবৃহদ্ধর্ম পুরাণ–এ ললিতাম্বা ত্রিপুরাসুন্দরী কে দেবীরই অপর নাম ষোড়শী নামে অভিহিত করা হয়েছে।[] গুহ্যাতিগুহ্য তন্ত্রে বলা হয়েছে মহাবিদ্যাগণই হলেন বিষ্ণু দশ অবতারের উৎস। দেবীর এই দশ রূপ, তা ভয়ংকরই হোক বা কোমল, বিশ্বজননী রূপে পূজিত হয়।

পৌরাণিক উপাখ্যান

[সম্পাদনা]

বৃহদ্ধর্ম পুরাণ–এ বর্ণিত কাহিনি অনুসারে, শিব ও তার স্ত্রী তথা পার্বতীর পূর্বাবতার দাক্ষায়ণী সতীর মধ্যে একটি দাম্পত্য কলহ দশমহাবিদ্যার উৎস। সতীর পিতা দক্ষ শিব ও সতীর বিবাহে মত দেননি। তাই তিনি যখন যজ্ঞের আয়োজন করেন তখন নববিবাহিত শিব-সতীকে আমন্ত্রণ জানান না। সতী বিনা আমন্ত্রণেই পিতৃগৃহে যেতে চাইলে শিব বারণ করেন। ক্রুদ্ধ সতী স্বামীর অনুমতি আদায়ের জন্য তৃতীয় নয়ন থেকে আগুন বের করতে থাকেন এবং কালী বা শ্যামায় রূপান্তরিত হন। এই মূর্তি দেখে পরমেশ্বর শিব সেসব এড়িয়ে যেতে উদ্যত হলে সতী দশ মহাবিদ্যার রূপ ধারণ করে শিবকে দশ দিক দিয়ে ঘিরে ফেলেন। এরপর শিব অনিচ্ছাকৃত ভাবে তাকে দক্ষযজ্ঞে উপস্থিত থাকার অনুমতি দান করেন।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. Mahavidyas Hindu goddesses: visions of the divine feminine in the Hindu religious tradition, by David R. Kinsley. University of California Press, 1988. আইএসবিএন ০-৫২০-০৬৩৩৯-২. Page 161-165.
  2. পৌরাণিকা: বিশ্বকোষ হিন্দুধর্ম, প্রথম খণ্ড, অমলকুমার মুখোপাধ্যায়, ফার্মা কেএলএম প্রাইভেট লিমিটেড, কলকাতা, ২০০১
  3. The Devī Gītā: the song of the Goddess, by Cheever Mackenzie Brown. SUNY Press, 1998. আইএসবিএন ০-৭৯১৪-৩৯৪০-২. Page 23
  4. Shankarnarayanan, S., The Ten Great Cosmic Powers: Dasa Mahavidyas. Samata Books (Chennai, 1972; 4th ed. 2002)., pp. 4, 5.
  5. Kinsley, David. Tantric Visions of the Divine Feminine: The Ten Mahavidyas. University of California Press (Berkeley, 1997).

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
{{bottomLinkPreText}} {{bottomLinkText}}
দশমহাবিদ্যা
Listen to this article

This browser is not supported by Wikiwand :(
Wikiwand requires a browser with modern capabilities in order to provide you with the best reading experience.
Please download and use one of the following browsers:

This article was just edited, click to reload
This article has been deleted on Wikipedia (Why?)

Back to homepage

Please click Add in the dialog above
Please click Allow in the top-left corner,
then click Install Now in the dialog
Please click Open in the download dialog,
then click Install
Please click the "Downloads" icon in the Safari toolbar, open the first download in the list,
then click Install
{{::$root.activation.text}}

Install Wikiwand

Install on Chrome Install on Firefox
Don't forget to rate us

Tell your friends about Wikiwand!

Gmail Facebook Twitter Link

Enjoying Wikiwand?

Tell your friends and spread the love:
Share on Gmail Share on Facebook Share on Twitter Share on Buffer

Our magic isn't perfect

You can help our automatic cover photo selection by reporting an unsuitable photo.

This photo is visually disturbing This photo is not a good choice

Thank you for helping!


Your input will affect cover photo selection, along with input from other users.

X

Get ready for Wikiwand 2.0 🎉! the new version arrives on September 1st! Don't want to wait?