For faster navigation, this Iframe is preloading the Wikiwand page for কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা.

কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা

কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা
বাংলার কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা
পালনকারীহিন্দু
ধরনপূজা
উদযাপনলক্ষ্মী পূজা, আলপনা আঁকা
শুরুশারদ পূর্ণিমা
তারিখআশ্বিনের পূর্ণিমা তিথি
সংঘটনবার্ষিক
সম্পর্কিতদুর্গা পূজা

বাংলায় শারদীয়া দুর্গোৎসবের পর আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের শেষে পূর্ণিমা তিথিতে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার আরাধনা করা হয়। বাঙালি হিন্দুর ঘরে ঘরে এক চিরন্তন প্রার্থনা।[] প্রায় প্রতি ঘরেই দেবী লক্ষ্মীর পূজা হয়ে থাকে। লক্ষ্মী হলেন ধন সম্পত্তির দেবী। ধন সম্পদের আশায় ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা হয়ে থাকে। নারী পুরুষ উভয়েই এই পূজায় অংশ গ্রহণ করেন।

অনেকেই সারা বছর প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীর পূজা করে থাকেন। এছাড়া শস্য সম্পদের দেবী বলে ভাদ্র সংক্রান্তি, পৌষ সংক্রান্তি ও চৈত্র সংক্রান্তিতে এবং আশ্বিন পূর্ণিমা ও দীপাবলীতে লক্ষ্মীর পূজা হয়। লক্ষণীয় বিষয় হল-খারিফ শস্য ও রবি শস্য ঠিক যে সময় হয় ঠিক সেই সময় বাঙালি হিন্দু মেতে ওঠে লক্ষ্মীর আরাধনায়। তবে পূজার উপাচারে পরিবর্তন হয় মাস ভেদে।[]

পূজার মন্ত্র

[সম্পাদনা]

অর্থাৎ 'হে হরিপ্রিয়ে, তুমি সকল প্রাণীকে বরদান করিয়া থাক, তোমাকে প্রণাম করি। যাহারা তোমার শরণাগত হয়, তাহাদের যে গতি, তোমার পূজার ফলে আমারও যেন সেই গতি হয়।'

পূজার সময়

[সম্পাদনা]

বর্তমানে গৃহস্থের সুবিধের জন্যই হোক বা পুরোহিতের স্বল্পতার জন্য, লক্ষ্মী পূজা (বারোমাসী পূজা বাদে) হয় সকাল থেকেই। কিন্তু কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার প্রকৃষ্ট সময় প্রদোষকাল। অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে দু ঘণ্টা পর্যন্ত যে সময়। যদিও প্রদোষ থেকে নিশীথ অবধি তিথি থাকলেও সেই প্রদোষেই পূজা বিহিত। কিন্তু আগেরদিন রাত্রি থেকে পরদিন প্রদোষ পর্যন্ত তিথি থাকলে পরদিন প্রদোষেই পূজা করা বিধেয়। আবার আগেরদিন রাতে তিথি থাকলেও যদি পরদিন প্রদোষে তিথি না থাকে তাহলে আগেরদিন প্রদোষেই পূজা করা কর্তব্য।

পূজার আচার

[সম্পাদনা]

কোজাগরী লক্ষ্মীপূজাতে দেখা যায় জেলা ভিত্তিক আঞ্চলিক আচার অনুষ্ঠান। এখনও ঘরে ঘরে প্রতি বৃহস্পতিবারে লক্ষ্মীর পাঁচালি পাঠ করে তাঁর আরাধনা করা হয়। উপচারে ফল মিষ্টি ছাড়াও থাকে মোয়া, নাড়ু ইত্যাদি। লক্ষ্মীর আচার অনুষ্ঠানেও দেখা যায় নানা ধরনের তাৎপর্য। কোনও কোনও পরিবারে পূজায় মোট ১৪টি পাত্রে উপচার রাখা হয়। কলাপাতায় টাকা, স্বর্ণ মুদ্রা, ধান, পান, কড়ি, হলুদহরিতকী দিয়ে সাজানো হয় পূজা স্থানটিকে। পূজার উপকরণ এবং আচার অনুষ্ঠান দেখে অনুমান করা যায় এর নেপথ্যে থাকা কৃষি সমাজের প্রভাব। কিছু কিছু জায়গায় লক্ষ্মীপূজা উপলক্ষে মেলা বসে। কোথাও বা নৌকাবাইচও অনুষ্ঠিত হয়।[]

'কে জেগে আছো'?

[সম্পাদনা]

'কোজাগরী' শব্দটির উৎপত্তি 'কো জাগতী' অর্থাৎ 'কে জেগে আছ' কথাটি থেকে। বলা হয়, 'যার কিছু (সম্পত্তি) নেই সে পাওয়ার আশায় জাগে, আর 'যার আছে (সম্পত্তি) যে না হারানোর আশায় জাগে'। আর সারারাত জেগে লক্ষ্মীর আরাধনা করাই এই পূজার বিশেষ আচার। কথিত আছে কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন দেবী রাত্রে খোঁজ নেন - কে জেগে আছেন? যে জেগে অক্ষক্রীড়া করে, লক্ষ্মী তাকে ধন সম্পদ দান করেন । []

অক্ষক্রীড়া শব্দের সাধারণন অর্থ পাশা খেলা। কেউ কেউ এই দিন পরের বাগানের ফলমূল চুরি করে। এই কাজের মাধ্যমে তারা ভাবে যে লক্ষ্মী দেবী তাদের কৃপা করবেন।

লক্ষ্মী পূজার আলপনা

[সম্পাদনা]
তেল রঙ দিয়ে দেওয়া আলপনা
আলপনার জন্য চালের গুড়ো করে গোলানো হয়েছে

অন্যান্য পূজা আর কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার আলপনাতে বেশ কিছু পার্থক্য থাকে। এই পূজাতে মূল আল্পনার সঙ্গে বাড়ি জুড়ে আঁকা হয় ধানের ছড়া, মুদ্রা, আর মা লক্ষ্মীর পায়ের ছাপের ছবি। এই প্রতীকগুলি পূজার মহত্ত্ব যেমন ব্যাখ্যা করে, তেমনই পূজার আচারের একটা অংশ হয়ে উঠেছে এই বিশেষ ধরনের আলপনা।[][][]

নানা ভাবে লক্ষ্মী দেবীর কল্পনা

[সম্পাদনা]

মূর্তি

[সম্পাদনা]

মাটি দিয়ে তৈরী ছাঁচে বা কাঠামো তৈরি করে তাতে দেবী মূর্তি স্থাপন করে পূজা করা হয়।[]

আড়ি লক্ষ্মী

[সম্পাদনা]

বেতের ছোট চুপড়ি বা ঝুড়িতে ধান ভর্তি করে তার ওপর দুটি কাঠের লম্বা সিঁদুর কৌটো লালচেলি দিয়ে মুড়ে দেবীর রূপ দেওয়া হত। একে বলা হত ‘আড়ি লক্ষ্মী’।[]

কলার বের

[সম্পাদনা]
কলার বের দিয়ে দেবী লক্ষ্মী কল্পনা

কলার বাকলকে গোল করে নারকেলের নতুন কাঠি দিয়ে আটকানো হয়। তাতে সিঁদুর দিয়ে বাঙালি স্বস্তিকা চিহ্ন আঁকা হয়। কলার বাকল দিয়ে তৈরী এই চোঙাকৃতি ভিতরে নিচুনি রাখা হয়। কাঠের আসনের উপরে লক্ষ্মীর পা অঙ্কিত আলপনার উপরে ৯টি চোঙা রাখা হয়। এই ৯তি বাকলের মধ্যে পঞ্চশস্য দেওয়া হয় সর্বশেষে শীষযুক্ত নারকেল রেখে লাল চেলি দিয়ে ঢেকে বউ সাজিয়ে লক্ষ্মী কল্পনা করা হয়।

সপ্ততরী

[সম্পাদনা]

নবপত্রিকা বা কলার পেটোর তৈরি নৌকা এই পূজার অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই নৌকা এখনও বহু গৃহস্থেই তৈরি হয়ে থাকে। তবে বাজারেও এখন কিনতে পাওয়া যায় কলার পেটো। একে সপ্ততরী বলা হয়। এই তরীকে বাণিজ্যের নৌকা হিসাবে ধরা হয়। তাতে অনকেই টাকা -পয়সা, চাল, ডাল, হরিতকি, কড়ি, হলুদ সাজিয়ে রাখেন।

লক্ষ্মীর মুখ সমন্বিত পোড়া মাটির ঘট

[সম্পাদনা]

লক্ষ্মীর মুখ সমন্বিত পোড়া মাটির ঘটে চাল বা কখনো কখনো জল ভরে সেটিকে লক্ষ্মী কল্পনা করে পূজা করা হয়।

সরায় পটচিত্র

[সম্পাদনা]
লক্ষ্মী সরা
সবাহন লক্ষ্মীসরা
লক্ষ্মী সরা
দেবী দুর্গাসহ সুরেশ্বরী লক্ষ্মীসরা
লক্ষ্মী সরা, বাংলার নিজস্ব পটচিত্রধারা

অনেক বাড়িতেই পূর্ববঙ্গীয় রীতি মেনে সরার পটচিত্রে পূজা করা হয়। এই সরাতে লক্ষ্মী, জয়া-বিজয়া সহ কয়েকটি বিশেষ পুতুলকে চিত্রায়িত করা হয়। লক্ষ্মী সরাও হয় নানা রকম, যেমন ঢাকাই সরা, ফরিদপুরি সরা, সুরেশ্বরী সরা এবং শান্তিপুরী সরা। নদিয়া জেলার তাহেরপুর, নবদ্বীপ এবং উত্তর চব্বিশ পরগনার বিভিন্ন স্থানে লক্ষ্মীসরা আঁকা হয়। তবে অঞ্চল ভেদে লক্ষ্মী সরায় তিন, পাঁচ, সাত পুতুল আঁকা হয়। এতে থাকে লক্ষ্মী, জয়া বিজয়া সহ লক্ষ্মী, রাধাকৃষ্ণ, সপরিবার দুর্গা ইত্যাদি। ফরিদপুরের সরায় দেবদেবীরা সাধারণত একটি চৌখুপির মধ্যে থাকেন। আবার সুরেশ্বরী সরায় উপরের অংশে মহিষমর্দিনী আঁকা হয় আর নিচের দিকে থাকেন সবাহন লক্ষ্মী।[১০]

ভোগ-প্রসাদ

[সম্পাদনা]

কোজাগরী লক্ষ্মীপূজার ভোগে অনেক বাড়িতেই জোড়া ইলিশ রাখা হয়। তবে ভোগ হিসাবে খিচুড়ি, লাবড়া থাকা আবশ্যিক। সঙ্গে প্রসাদে ফলমূল তো থাকেই , থাকে নারকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ু, ভুশের নাড়ু। এছাড়াও লুচি, পায়েস, মিষ্টির নানা আয়োজন থাকে মা লক্ষ্মীর জন্য।[] পূর্ববঙ্গীয় রীতিতে এইদিন মাছের পাঁচ পদের রান্না হয়। আবার পশ্চিমবঙ্গীয় রীতিতে এই দিন পুরো নিরামিষ খাওয়া দাওয়া হয় এবং চালের কোনো রান্না করা হয় না।

পেঁচক বা পেঁচা - মা লক্ষ্মীর বাহন

[সম্পাদনা]

ধান হল লক্ষ্মীর প্রতীক। চাল , অন্ন , খাদ্যশস্য হল লক্ষ্মীর প্রতীক। তাই যারা খাদ্য অপচয় করেন , তাদের ওপর দেবী লক্ষ্মী কখনোই তুষ্ট হন না। ধানক্ষেতের আশেপাশে ইঁদুর বা মূষিকের বাস এবং এরা ধানের ক্ষতি করে থাকে। পেঁচক বা পেঁচার আহার হল এই ইঁদুর। গোলাঘরকে লক্ষ্মীর প্রতীক বলা হয়। গোলাঘরের আশেপাশে ইঁদুরের বসবাস। পেঁচা এই ইঁদুরকে খেয়ে খাদ্যশস্য রক্ষা করে।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "কোজাগরী পূর্ণিমা: লক্ষ্মীপূজার সহজ বিধি"। সংবাদ প্রতিদিন। ১৫ অক্টোবর ২০১৬। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ অক্টোবর ২০১৭ 
  2. "লক্ষ্মীদেবীর কাহিনি"। Bangla Tribune। 15 অক্টো 2016 পূজা। ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭October 2017  line feed character in |তারিখ= at position 14 (সাহায্য); এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  3. "শ্রী শ্রী কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর খুঁটিনাটি"bengali.oneindia.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-০৮ 
  4. "কোজাগরী পূর্ণিমা: লক্ষ্মীপূজার সহজ বিধি"Sangbad Pratidin (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-০৯-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-০৮ 
  5. বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস। "লালচেলি পরে আসতেন আড়ি লক্ষ্মী"anandabazar.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-০৭ 
  6. বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস। "পিটুলির আলপনায় দাওয়া যেন নকশিকাঁথা - Anandabazar"anandabazar.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-০৮ 
  7. "আনন্দবাজার পত্রিকা"। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-০৮ 
  8. "বরিশালে লক্ষ্মীর-হাট: লক্ষ্মী পূজা আজ"Newsnext Bangladesh (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৭-১০-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-০৮ 
  9. বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাশিস। "প্রতিমা ছাড়াই বাড়িতে পুজো হত কোজাগরী লক্ষ্মীর - Anandabazar"anandabazar.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-০৭ 
  10. Eibela.Com। "মা লক্ষ্মীর আলপনা তৈরি করেন যারা"Eibela। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১০-০৮ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
{{bottomLinkPreText}} {{bottomLinkText}}
কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা
Listen to this article

This browser is not supported by Wikiwand :(
Wikiwand requires a browser with modern capabilities in order to provide you with the best reading experience.
Please download and use one of the following browsers:

This article was just edited, click to reload
This article has been deleted on Wikipedia (Why?)

Back to homepage

Please click Add in the dialog above
Please click Allow in the top-left corner,
then click Install Now in the dialog
Please click Open in the download dialog,
then click Install
Please click the "Downloads" icon in the Safari toolbar, open the first download in the list,
then click Install
{{::$root.activation.text}}

Install Wikiwand

Install on Chrome Install on Firefox
Don't forget to rate us

Tell your friends about Wikiwand!

Gmail Facebook Twitter Link

Enjoying Wikiwand?

Tell your friends and spread the love:
Share on Gmail Share on Facebook Share on Twitter Share on Buffer

Our magic isn't perfect

You can help our automatic cover photo selection by reporting an unsuitable photo.

This photo is visually disturbing This photo is not a good choice

Thank you for helping!


Your input will affect cover photo selection, along with input from other users.

X

Get ready for Wikiwand 2.0 🎉! the new version arrives on September 1st! Don't want to wait?