For faster navigation, this Iframe is preloading the Wikiwand page for আপেপ.

আপেপ

আপেপ
অন্ধকার, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যের দেবতা
সর্পরূপী আপেপ
চিত্রলিপি
O29
p p
প্রতীকসাপ, ড্রাগণ
ব্যক্তিগত তথ্য
মাতাপিতানেথ
সহোদররা

আপেপ (উচ্চারণান্তরে অ্যাপেপ, অথবা প্রাচীন গ্রিক অনুযায়ী আপোফিস) হলেন প্রাচীন মিশরীয় ধর্মের এক শয়তান দেবতা। এঁর প্রতীক হল সাপ এবং ড্রাগণ। ইনি অন্ধকার ও বিশৃঙ্খলার ব্যক্তিরূপ, আর সেই সূত্রে মাআতের (শৃঙ্খলা/সত্য) বিরোধী। এঁর অস্তিত্ব অষ্টম রাজবংশের শাসনকাল থেকে মান্যতা পেয়েছিল। মিশর বিশেষজ্ঞরা এঁর নামের উচ্চারণ পুনরুদ্ধার করেছেন প্রাপ্ত হায়ারোগ্লিফিক লিপি এবং বর্তমান কপটিক উচ্চারণ থেকে।

ধারণার ক্রমপরিণতি

[সম্পাদনা]
O29
p p
[]
আপেপ
চিত্রলিপিতে

রা ছিলেন মিশরের সৌর দেবতা, আলোর আহ্বায়ক এবং সেই সূত্রে মাআতের সমর্থক। আপেপকে রা-এর প্রধান বিরুদ্ধ শক্তি হিসেবে দেখা হত; ফলে তাকে রা-এর শত্রু আখ্যা দেওয়া হয়। এছাড়া "বিশৃঙ্খলার অধিপতি"-ও তার আরও একটি নাম।

সমস্ত রকম অশুভের ব্যক্তিরূপ আপেপ একটি দৈত্যাকার সর্প হিসেবে কল্পিত হতেন। পরবর্তীকালে ক্রমশ তার ড্রাগণ মূর্তিটি বেশি মান্যতা পেতে থাকে এবং নীল নদের সাপশয়তান গিরগিটি প্রভৃতি নামগুলোর জন্ম হয়। কোনো কোনো বিবরণ অনুযায়ী তার দৈর্ঘ্য ১৬ গজ এবং তার মাথা কঠিন চকমকি পাথরে তৈরি। নাকাদায় প্রাপ্ত আনুমানিক ৪০০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে নির্মিত একটা পাত্রের কানায় একটা ছবি আঁকা আছে। ছবিতে দেখা যায় মরুভূমি ও জলের পলায়মান অন্য কিছু প্রাণীর সাথে এক সাপ, যে সম্ভবত একজন দেবতার বিরোধিতা করছে। এই দেবতা, খুব সম্ভবত একজন সৌর দেবতা, নিজে অদৃশ্য অবস্থায় একটা বিরাট নৌকার উপর থেকে প্রাণীগুলোকে শিকার করছেন[]

এছাড়াও আপেপ নামটির প্রচলন হওয়ার আগে থেকেই অন্যান্য নামে সূর্যের দেবতার শত্রু হিসেবে সাপের প্রতীকের ব্যবহার চালু ছিল (পিরামিড লিপি ও কফিন লিপিসমূহে)। নামটির ব্যুৎপত্তি খোঁজার চেষ্টা হয়েছে কিছু কিছু প্রাচীন পশ্চিম সেমিটিক ভাষায়, যেখানে কাছাঁকাছি উচ্চারণের মূল শব্দ রয়েছে যা দিয়ে 'পিছলে যাওয়া' বা 'সাপের মত এঁকেবেঁকে চলা' বোঝায়। আপেপের নামের সম্পূর্ণ আলাদা একটা ব্যুৎপত্তিগত ব্যাখ্যা পরবর্তীকালে চালু হয়; যাকে মুখ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছেরোমানরা আপেপের নামের এই অনুবাদটিকে ব্যবহার করত। আপোফিসকে এক মাইলেরও বেশি লম্বা সোনালি সাপ বলে এই সময় কল্পনা করা হত। বিশালদেহী আপেপ প্রতিদিন সূর্যকে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করতেন।

সেত ক্রমশ আপেপের সমস্ত বৈশিষ্ট্য অধিকার করেন এবং নৈরাজ্যের দেবতার পদও আপেপের থেকে তার দিকে সরে আসতে থাকে। অবশেষে তার ও আপেপের সত্তা মিশরীয় জনমানসে একাকার হয়ে যায়[]

রা-এর সঙ্গে যুদ্ধ

[সম্পাদনা]
সেত আপেপকে বর্শাবিদ্ধ করছেন; বাঁ দিকে রা
মহাকায় বিড়ালরূপী সূর্যদেবতা রা সর্পরূপী আপেপকে বধ করছেন[]

নতুন রাজ্যের সময় আপেপ এবং রা-এর যুদ্ধের গল্পগুলো তৈরি হয়[]। যেহেতু সবাই দেখতে পায় যে প্রতিদিন কোনো বিরাট সাপ সূর্যকে আক্রমণ করতে আসে না, তাই গল্পকারেরা প্রচার করেন যে আপেপের বাস দিগণ্তরেখার নিচে। এর ফলে তাকে পাতালের বাসিন্দা হিসেবে তুলে ধরারও সুবিধে হয়। কোনো গল্পে আপেপকে দূর পশ্চিমে অবস্থিত বাখু পাহাড়ে সূর্যাস্তের জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাকতে দেখা যায়,আবার কোনো গল্পে তিনি পূর্ব দিগণ্তের ঠিক নিচে, রাত্রির দশম অঞ্চলে অপেক্ষা করেন। আপেপের সম্ভাব্য অবস্থানের বিশালতার জন্য তাকে বিশ্ব বেষ্টক বলা হয়। তার গর্জনে সমগ্র পাতাল নাকি কেঁপে উঠত। পুরাণে বলা হয় আপেপ প্রকৃতপক্ষে পাতালে অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন, কারণ তিনিই ছিলেন রা-এর আগে প্রধান দেবতা যাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করে রা-এর উত্থান হয়। এছাড়া তার দোষ্কৃতির জন্য তাকে বন্দী করা হয়েছিল এমন কথাও বলা হয়।

রা এবং তার সহচরেরা পাতালের নদী বেয়ে ভ্রমণে বেরোলে আপেপ তার দৃষ্টির দ্বারা তাদেরকে সম্মোহিত করে নৌকাসুদ্ধ নিজের কুণ্ডলীতে চূর্ণ করে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করতেন। কখনও কখনও সেক এবং মোত নামের দুই দানব তাকে এ'কাজে সাহায্য করত। রা কে সাহায্যের জন্যও একাধিক দেবতা থাকতেন, যাঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন সেত, যিনি নৌকার হাল ধরে থাকতেন।

নির্দিষ্ট কিছু প্রাকৃতিক ঘটনার ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য বলা হত এই লড়াইয়ে আপেপ কখনও কখনও জিতে যান। এর ফলে জগৎের শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি ও ভূমিকম্প হয়। এমনকি এ-ও বলা হত যে আপেপ রা-কে পুরোপুরি গিলে ফেললেই সূর্যগ্রহণ হয়। কিন্তু রা-এর সহচরেরা খুব তাড়াতাড়ি আপেপের দেহ ছিন্ন করে দেন বলে গ্রহণ অল্প সময়ের মধ্যেই কেটে যায়। যদিও আপেপ নিহত হলেও প্রতি রাত্রে আবার ফিরে আসার ক্ষমতা রাখেন, কারণ পাতাল তথা মৃত্যুলোকেই তার বাস।

অবশ্য অন্য কিছু পুরাণ অনুযায়ী রা-এর কন্যা, বিড়ালের আকৃতিবিশিষ্ট দেবী বাস্তেত তার সর্বদ্রষ্টা চোখ দিয়ে আপেপকে খুঁজে বার করে এক রাত্রে তাকে বধ করেন।

অর্চনা

[সম্পাদনা]

রা-এর উপাসনা করা হত, আর আপেপের বিরুদ্ধে উপাসনা করা হত। প্রতি রাত্রে রা-এর জয় মন্দিরে মন্দিরে রা-এর পুরোহিত ও উপাসকদের চেষ্টাতেই সম্পন্ন হচ্ছে বলে মনে করা হত। প্রাচীন মিশরীয়রা আপেপকে প্রতিহত করার জন্য এবং আকাশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে রা-এর যাত্রায় সাহায্য করার জন্য অনেক প্রথা ও কুসংস্কার পালন করত।

বিশৃঙ্খলার অবসান নামক একটি বার্ষিক উৎসবে পুরোহিতরা আপেপের একটি কুশপুতুল বানিয়ে পোড়াতেন। ধারণা করা হত যে এর মাধ্যমে মিশরের সমস্ত পাপ ভস্মীভূত হল এবং এক বছরের জন্য আপেপের প্রভাব ঠেকিয়ে রাখা গেল। আধুনিক ভারতের দশেরা উৎসবের সাথে এই কার্যক্রমের কিছু মিল পাওয়া যায়।

আপেপের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মিশরীয় পুরোহিতদের সুসংবদ্ধ একটা নির্দেশিকা পর্যন্ত ছিল। এর নাম আপেপকে পরাজিত করার বই বা (গ্রিকে) আপোফিসের বই[]। এর আলাদা আলাদা অধ্যায়ে ক্রমান্বয়ে আপেপের অঙ্গ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে নষ্ট করে ফেলার কথা আছে। এর একটা উদ্ধৃতি:

   আপেপের গায়ে থুতু দাও
   বাঁ পায়ে ওকে লাথি মারো
   বর্শা দিয়ে খোঁচাও ওকে
   আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে মারো
   ছুরি দিয়ে কুচিয়ে ওকে
   আগুন জ্বেলে পুড়িয়ে মারো

রা-এর বিজয়ের কাহিনী ছাড়াও এই নির্দেশিকায় মোমের পুতুল সাপ, সাপের ছোট ছোট ছবি ইত্যাদি তৈরি করে সেগুলোয় থুতু দিয়ে ছিঁড়ে ফেলে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া আছে; এই কাজ করার সময় আপেপের মৃত্যু নিশ্চিত করতে মন্ত্র পড়তে হত। আপেপের যে কোনো অণুকৃতি মূল দেবতার শক্তিবৃদ্ধি করতে পারে আশঙ্কা করে সমস্ত অণুকৃতির সাথে অন্য কোনো দেবদেবীর অণুকৃতি রাখা হত; যাতে ঐ দ্বিতীয় দেবতা আপেপকে দমিয়ে রাখতে পারেন।

পাতালে থাকেন বলে আপেপকে ক্ষেত্রবিশেষে আত্মা-ভক্ষক হিসেবেও কল্পনা করা হত। ফলে মৃতদেরকেও আপেপের হাত থেকে বাঁচাতে মন্ত্র পড়ে কবরস্থ করা হত। বুক অফ দ্য ডেড খুব কম অংশেই রা-এর হাতে আপেপের স্পষ্ট পরাজয়ের কথা উল্লেখ করেছে। কেবল 'বিডি মন্ত্রসমূহের' সপ্তম ও ত্রিংশতিতম মন্ত্রদু'টি এই পরিস্থিতির বর্ণনা দেয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Hieroglyph as per Budge Gods of the Ancient Egyptians (1969), Vol. I, 180.
  2. C.Wolterman, in Jaarbericht van Ex Oriente Lux, Leiden Nr.37 (2002).
  3. H. Te Velde, Seth, God of Confusion (Leiden, 1977), 105-7.
  4. tomb of Inherkha, Deir el-Medina
  5. J. Assmann, Egyptian Solar Religion in the New Kingdom, transl. by A. Alcock (London, 1995), 49-57.
  6. P.Kousoulis, Magic and Religion as Performative Theological Unity: the Apotropaic Ritual of Overthrowing Apophis, Ph.D. dissertation, University of Liverpool (Liverpool, 1999), chapters 3-5.
{{bottomLinkPreText}} {{bottomLinkText}}
আপেপ
Listen to this article

This browser is not supported by Wikiwand :(
Wikiwand requires a browser with modern capabilities in order to provide you with the best reading experience.
Please download and use one of the following browsers:

This article was just edited, click to reload
This article has been deleted on Wikipedia (Why?)

Back to homepage

Please click Add in the dialog above
Please click Allow in the top-left corner,
then click Install Now in the dialog
Please click Open in the download dialog,
then click Install
Please click the "Downloads" icon in the Safari toolbar, open the first download in the list,
then click Install
{{::$root.activation.text}}

Install Wikiwand

Install on Chrome Install on Firefox
Don't forget to rate us

Tell your friends about Wikiwand!

Gmail Facebook Twitter Link

Enjoying Wikiwand?

Tell your friends and spread the love:
Share on Gmail Share on Facebook Share on Twitter Share on Buffer

Our magic isn't perfect

You can help our automatic cover photo selection by reporting an unsuitable photo.

This photo is visually disturbing This photo is not a good choice

Thank you for helping!


Your input will affect cover photo selection, along with input from other users.

X

Get ready for Wikiwand 2.0 🎉! the new version arrives on September 1st! Don't want to wait?